ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বরিশাল নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

* সদর রোডসহ ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে
বরিশাল নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার ১০ বছর পর বরিশাল নগরে ৩৪টি ভবন ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল শুক্রবার সকালে নগরের সদর রোডে দুটি তিনতলা ভবন ভাঙার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের বাধা, আইনি লড়াইসহ নানা কারণে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এত দিন ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। আজ যে দুটি ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়, সেগুলো দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষ হওয়ার পর ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই নিরাপত্তার স্বার্থে ভাঙা হবে।

সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক বিভাগ জানায়, বরিশাল নগরের বটতলা, সদর রোডসহ ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জরিপে এসব ভবনকে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে যেমন পুরোনো বহুতল ভবন আছে, তেমনি বেশ কয়েকটি নতুন ভবনও আছে। পর্যায়ক্রমে এসব ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদর রোডে যে দুটি ভবন ভাঙা হচ্ছে, এরমধ্যে একটি ভবন হেলে পড়ে এবং ফাটল দেখা দেয়।

একটি ভবনের মালিক নজরুল ইসলাম জানান, তার চাচা উলফাত হাজি ও শুককুর হাজি ১৯৬০ সালে একটি ভবন ও ৩০ বছর আগে আরেকটি ভবন সদর রোডে নির্মাণ করেন। ২০১৩ সালে একটি পাকা ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং পাশের ভবন ঘেঁষে হেলে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ২০১৩ সালে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু ভারতেরা জোর করে দখলে রাখায় ওই সময় ভাঙার উদ্যোগ নিয়েও সফল হওয়া যায়নি। পরে ভবন ভাঙার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা সিটি কর্পোরেশনে জমা দেওয়ার পর তারা ভবনটি গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ভেঙে ফেলা শুরু করেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘উলফাত ও শাকুর ম্যানশন নামের ওই দুটি ভবন ইতিপূর্বে ভাঙার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাড়াটেরা আদালতে গেছেন। আমরা কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রায় পেয়েছি। এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে সেখানে নোটিশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরও ভাড়াটেরা দখল ছাড়েননি। আজ সকালে তাঁদের চূড়ান্তভাবে চলে যাওয়ার নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু হয়। আশা করছি, সাত দিনের মধ্যে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা সম্ভব। সেই সঙ্গে অন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে।’ ২০১৬ সালে নগরের ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। এসব ভবনে ওই সময় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। পরবর্তী সময়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্পোরেশন। এছাড়া এর পর থেকে কর্পোরেশন নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করারও কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ভবনগুলোর মধ্যে নগরের কাঠপট্টি রোডের পুরোনো একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিকপক্ষ ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করেছে। বাকি ৩৪টি ভবন আগের অবস্থাতেই রয়েছে। এখন দুটি ভবন ভাঙা শুরু হয়েছে। এসব ভবনের মধ্যে রয়েছে নগরের কাউনিয়া এলাকার জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোড কাজি অফিসের পেছনে রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডে মহিলা কলেজসংলগ্ন মনু মিয়ার ভবন, সদর রোডসংলগ্ন ফজলুল হক অ্যাভিনিউর হোটেল বাহাদুর ভবন, সার্কুলার রোডের সৈয়দ মনছুর আহমেদ ভবন, সদর রোডের শাকুর ম্যানশন, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, হাসপাতাল রোডে মান্নান মৃধার ভবন, কালুশাহ সড়কে জালাল আহমেদের ভবন, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের পুরাতন হোস্টেল ভবন, মেডিকেল কলেজ লেনের মো. ফরিদ উদ্দিনের ক্ষণিকা ভবন, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন ছাত্রবাস, বগুড়া রোডের সালাম চেয়ারম্যানের পুরাতন ভবন, সদর রোডের পশ্চিম পার্শ্বে হাজি ইসরাইলের ভবন, হাতেম আলী কলেজের জ্ঞান-বিজ্ঞান ভবন, দক্ষিণ চকবাজার নগর ভবনসংলগ্ন জেলা পুলিশের মালখানা ও গারদখানা, সিঅ্যান্ডবি রোডের উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবন, সদর রোডের সৈয়দ ভবন, কাউনিয়া প্রধান সড়কের বেনী লাল গুহর ভবন, রূপাতলী এলাকার নলছিটি প্লাজা, কাঠপট্টির মিল্লাত ফার্মেসি এবং একই এলাকার চন্দ্রিকা ব্রাদার্স, আহম্মদ ক্লথ স্টোর্স জুম্মান ব্রাদার্স, অমৃত ভবন, সৈয়দ কামাল হোসেন রুবেলের ভবন, চিত্ত সাহা ভবন, সাধনা ঔষধালয় ভবন, ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ের গোল্ডেন টাওয়ার ভবন, হাসপাতাল রোডের মো. মনিরুজ্জামানের ভবন, বগুড়া রোডের মাহাবুব হোসেন ও মাহফুজ হোসেনের ভবন।

তবে এরমধ্যে কিছু অনুমোদনহীন এমন কিছু ভবনও রয়েছে। যেগুলো নিয়ে মালিকপক্ষের আপত্তি রয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ভবনই শত বছরের পুরোনো।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত