
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অপমানজনক অবস্থায় নিয়ে গেছেন। ১৮ ডিসেম্বর সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যে হামলা হয়েছে, একাত্তরের পর এমন নারকীয়তা আর হয়নি। অথচ যারা হামলার শিকার হয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তারও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় সরকার ও উপদেষ্টারা নির্লিপ্ত ভূমিকা রেখেছে। এমন ভয়ংকর পরিবেশ দেখার জন্য আমরা এই সরকার আনিনি। দেশে সরকার আছে কি-না তার অস্তিত্বও বুঝা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শরিফ ওসমান হাদির বিচারের দাবিতে এবং সংবাদ মাধ্যম সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যম থেকে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কারা জড়িত, তাও চিহ্নিত। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। বরং চিহ্নিত খুনি ভারতে পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে তনু, মুনিয়া, ত্বকি হত্যার কোনো বিচার করা হয়নি। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ও ছায়ানট আগে থেকেই টার্গেট করা হয়েছিল। সাংবাদিক নুরুল কবির বিগত সরকারের সময়ে সংগ্রাম করলেও তাকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখেনি। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল অচিন্তনীয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখেছি প্রকৃত অপরাধীকে না ধরে নিরীহদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন প্রকাশে সংবাদপত্র অফিসে হামলা ও লুটপাট হলেও সরকার ও উপদেষ্টাদের কেউ কথা বলছে না। কিছু রাজনৈতিক দল সহিংসতার বিপক্ষে বললেও অন্যদিকে উস্কানি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন অধ্যাপক আন মুহাম্মদ
১। শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২। ১৮ ডিসেম্বর রাতজুড়ে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট, সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি-৩২ এ হামলাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত প্রতিটি হামলার তদন্ত করতে হবে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
৩। সরকারকে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। জনগণেন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।
৫। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংঘবদ্ধ উষ্কানিদাতাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬। ওসমান হাদির জানাজার আগে-পরে যেন কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- শহিদুল আলম, সীমা দত্ত, শামসুল হুদা, সারা হোসেন, বাকি বিল্লাহ, ফেরদৌস আরা রুমি, শফিকুর রহমান, তাসলিমা আক্তার, জাকির হোসেন, ওয়ারদা আশরাফ, আকরাম খান, ফারহানা শারমিন ইমু। উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, ব্রেইন, ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, সম্প্রীতি যাত্রা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম, জনভাষ্য, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, থিয়েটারকর্মীরা, টেক গ্লোবাল ইন্সটিটিউট, বটতলা এ পারফরমেন্স স্পেস, নারীপক্ষ, এএলআরডি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, ভয়েজ ফর রিফর্ম, নাগরিক কোয়ালিশন ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির প্রতিনিধিরা।