ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রকৃতি ও জীবন

তাবাসসুম মাহমুদ
প্রকৃতি ও জীবন

মানবসভ্যতার একাত্মতা এ ধরার প্রকৃতি। প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ের পরিপূরক। প্রকৃতি ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি মানুষ ছাড়াও প্রকৃতি বাঁচে না। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে পারে প্রকৃতি ও মানুষের একাত্মতা। প্রকৃতিকে যখন মানুষ আপন করে নেয়, তখনই মানুষ প্রকৃতির অত্যন্ত নিকটাত্মীয় হয়ে যায়। তবে প্রকৃতি যতটা শান্ত নিবিড় ও নিঃস্বার্থ, মানুষ তার এক টুকরোও নয়। যখনই মানুষ প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় মাতে, বৃক্ষনাশ করে, নদী-সমুদ্রকে দূষণ করে, তখন সে প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে সরে যায়। মানুষ নিজেই মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, সঙ্গে পৃথিবীরও। প্রকৃতিকে ভালোবাসার অর্থ নিজেকেও ভালোবাসা। খেত, নদী, বন, পাহাড় ইত্যাদি মানুষের কল্যাণে। প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ- যেমন পাহাড়ের ঝরনাধারা, সমুদ্রের ঢেউ, বনরাজির সবুজ্ব মানুষের জীবনে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ঋতুকালীন গাছগাছালি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকারের ফল-ফুল মানুষ পায়। দৃষ্টিনন্দন ফুল যার সুরভিতে মানুষের প্রাণ ভরে যায়।

এসডিজি বাস্তবায়নে পরিবেশের প্রভাব : প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ্ব সঙ্কটের মুখোমুখি। এ সঙ্কট বিশেষ কোনো গোষ্ঠী, দেশ বা জাতির নয়, সমগ্র মানবজাতির। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন পরিবেশ। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে চাই দূষণমুক্ত পরিবেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ভারত ও চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান।

অন্যদিকে বড় শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে রাজ্বধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ্ব প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে ৪ নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জ্বনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টির লক্ষ্যমাত্রার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। বিশেষভাবে যে সব লক্ষ্যমাত্রা সরাসরি সম্পর্কিত, সেগুলো হলো- এসডিজি-২, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন, এসডিজি-৩, সবার জ্বন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, এসডিজি-৬, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, এসডিজি-৭, সবার জ্বন্য জ্বালানি বা বিদ্যুৎ সহজ্বলভ্য করা, এসডিজি-১১, মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা, এসডিজি-১২ সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার, এসডিজি-১৩, জ্বলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ, এসডিজি-১৪, টেকসই উন্নয়নের জ্বন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা, এসডিজি-১৫, ভূমির টেকসই ব্যবহার, এসডিজি-১৬, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ্ব, সবার জ্বন্য ন্যায়বিচার, সব স্তরে কার্যকর, জ্ববাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এবং এসডিজি-১৭, টেকসই উন্নয়নের জ্বন্য এসব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা। কাজেই এসডিজির বাস্তবায়নে পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব প্রতিভাত হচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষায় সজাগ ও সচেতনতা জ্বরুরি : পরিবেশ বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ আমাদেরই নিতে হবে। জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করলে দূষণের মাত্রা আরও কমবে।

যেমন- প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে তার ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে। নতুন প্রজ্বন্ম বেশ ভাবতে শিখেছে। যদিও তারাই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবেশ নষ্টের জ্বন্য দায়ী, যা তারা সরাসরি বুঝতে পারছে না। আজ্ব সময় এসেছে প্রকৃতির বন্ধু খুঁজে বের করার, অর্থাৎ মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর। এছাড়া গ্রাম থেকে শহরে সবাইকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষেত্রে সৃষ্ট পরিবর্তন ও করণীয় সম্পর্কে জানানোর। এ ক্ষেত্রে সারা বছর ও দেশব্যাপী একটি অভিযান পরিচালিত হতে পারে। প্রকৃতির ক্ষতি করে সুন্দর জীবন ধারণ কখনোই সম্ভব নয়। তাই সার্বিক বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে, পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করার ক্ষেত্রে ও বিশ্বব্যাপী গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি সবাইকে জানাতে মিডিয়াকে আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোকে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি পরিবেশবান্ধব ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে হবে।

দারিদ্র্যবিমোচন ও জ্বলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে দেশকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সবাই একই কথা বলেন। তাই এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি উন্নয়ন করতে চাই এবং একে টেকসই করতে চাই, তাহলে পরিবেশ সুন্দর রাখতে হবে। আমরা যদি পরিবেশ ঠিক রাখতে না পারি, তাহলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর সচেতনতা সৃষ্টির অন্যান্য সাপোর্টও প্রয়োজ্বন। এটি সরকারের পলিসি থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন সহায়তা হতে পারে। আগামী দিনের উন্নয়নে প্রকৃতি ও সমাজ্বকে রক্ষা করার যে অঙ্গীকার, সেটি রক্ষা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ্ব হলো বাস্তবায়ন। আমাদের সেটি বাস্তবায়নের দিকে এগুতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত