বৃষ্টিতে মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি ও উর্বরতার শক্তি। বৃষ্টি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ বৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন।
বৃষ্টির সময় দোয়া : রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করতেন। বৃষ্টি যেমন আল্লাহর রহমত, তেমনই আবার কখনও গজবও হয়ে উঠতে পারে। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও। (বোখারি : ১০৩২)। আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এলো। রাসুল (সা.) তখন তার গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে গায়ে বৃষ্টির ছিঁটা লাগে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন?’ তিনি বললেন, ‘কারণ, বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম : ৮৯৮)।
ঝড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া : দমকা হওয়া বইতে দেখলে নবীজি (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হতেন। আয়েশা (রা.) বলেছেন, আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কিনা।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (মুসলিম : ১৯৬৯)। রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এ বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি। (সু নানে আবি দাউদ : ৫১৯৯)।
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া : রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এ দোয়া করেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া লাইনা ওয়া আলাইনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশপাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ (সুনানে নাসায়ি : ১৫২৭)।
বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার দোয়া : প্রবল বৃষ্টি হলে নবীজি (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন। (বোখারি : ১০১৪)।
বজ্রপাতের সময় দোয়া : আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বজ্রপাতের সময় কথা বন্ধ রাখতেন। কেবল বলতেন, ‘ওয়া ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি, ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’ অর্থাৎ বজ্র ও সব ফেরেশতা সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসা পাঠ করে। (সুরা রাদ : ১৩)।
বৃষ্টির সময় দোয়ার উপকারিতা : বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়। তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সুযোগ। সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুটি দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না- আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম : ২৫৩৪, আল-মুজামুল আওসাত : ৫৭৫৬, সহিহুল জামে : ৩০৭৮)।
বৃষ্টি শেষে দোয়া : বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুল (সা.) সাহাবিদের এ দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বোখারি : ১০৩৮)।