ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রিমঝিম এই বর্ষাজীবন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
রিমঝিম এই বর্ষাজীবন

বৃষ্টিধোয়া প্রকৃতির রূপে মন : বর্ষাই তো বাংলার চিরায়ত রূপ। কখনও রিমঝিম গান গেয়ে বৃষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটি সুরে সুরে ভরিয়ে তোলে প্রকৃতি। আবার ঝুমঝুম নূপুর বাজিয়ে মুগ্ধ করে দেয় আমাদের মন। বর্ষায় খাল-বিল-পুকুর-নদী-ডোবা পানিতে থইথই করে। সবুজ সজীবতায় গাছপালা, বন-বনানী প্রাণ ফিরে পায়। আর কত ধরনের ফুল ফোটে এ বর্ষায়। খাল-বিলে বাংলার জাতীয় ফুল শাপলার অপরূপ দৃশ্য তো আছেই। শাপলা ও পদ্মও রূপ ছড়াতে কম যায় না। কেয়া, কামিনী, হিজল, বকুল, জারুল, করবী ও সোনালু এসবও বর্ষা ঋতুতে ফুটে থাকতে দেখা যায়। আর জুঁই-চামেলিকে বাদ দেব কী করে! তবে বর্ষার প্রধান ফুল হলো কদম। বৃষ্টিভেজা কদমের মনকাড়া সৌরভ ভিজে বাতাসে মিশে ছড়িয়ে পড়ে সারা প্রকৃতিতে। অবশ্য এ দৃশ্য গ্রামবাংলাতেই বেশি চোখে পড়ে। আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ প্রকৃতির এক অবারিত দান বর্ষাকাল। আমাদের জীবনযাত্রার পথে বর্ষার স্নিগ্ধ পরশ প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বর্ষার রূপ-রস আর সৌন্দর্যে প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। বৃষ্টিধোয়া প্রকৃতির রূপে মন মেতে ওঠে। বর্ষার রিমঝিম শব্দে মন হয়ে ওঠে কাব্যময়। প্রচণ্ড তাপদাহকে বিদায় জানিয়ে বর্ষারানির বর্ষণে সিক্ত হয় প্রকৃতি। ফিরে পায় প্রাণ। বয়ে যায় শীতল বাতাস। নেমে আসে প্রশান্তি। বর্ষা মৌসুমে মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ায়, মন ভরে যায়।

অতি প্রিয় ঋতুর আখ্যান : শহর কিংবা গ্রামে বৃষ্টি ভেজা পথে পিচ্ছিল খেয়ে পড়েনি বা বৃষ্টির পানিতে ভেজেনি, এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। বাঙালির অতি প্রিয় ঋতু বর্ষাকাল। বর্ষায় প্রকৃতির অপরূপ আর আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো মেঘের ভেলা মন কেড়ে নেয়। অবারিত মাঠ, মেঘলা আকাশ, টলমলে জলের পুকুর, মাটির সোঁদা গন্ধ, ভেজা সবুজ ঘাস আর পাতার হাসি দেখতে ভালো লাগে। শাপলা, পদ্ম, কদম কেয়া- আরও কত রং-বেরঙের ফুল-ফসলের হাসিতে জেগে ওঠে বাংলার প্রতিটি জনপদ। বর্ষার থইথই জলে শৈল, বোয়াল, কই, সিং, জাগুর ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। আসমানে গুড়ুম গুড়ম ডাক দিলে সাগর-নদী থেকে এসব মাছ খাল, বিল, পুকুর ও জলাশয়ে উঠে আসে। বর্ষাকালে টাটকা মাছের স্বাদই আলাদা। আষাঢ়-শ্রাবণ- এ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে থাকে বর্ষাকাল। বাংলা সাহিত্যে বর্ষা ঋতুর বেশ প্রভাব পড়েছে। বর্ষার কাদাজলে মিশে আছে বাঙালির প্রাণ। বাইরে ঝড় বয়, অথচ জানালার পাশে বসে দাদা-দাদির কাছে গল্প শুনে বেশ আনন্দ উপভোগ করে কচিকাঁচার দল।

বাঙালির নতুন দিনের আবাহন : গ্রীষ্মের রুদ্র-রুক্ষ প্রকৃতির গ্লানি ধুয়ে মুছে প্রশান্তি আর স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে জীবন। রোদণ্ডবৃষ্টির খেলায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় বাঙালির মনে। বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যায়, প্রচণ্ড খরায় অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ কুলা, থালাবাটি নিয়ে উঠানে নেমে আল্লাহ মেঘ দে, বৃষ্টি দে গান গাইতে থাকে। কুয়ার ভেতর থেকে ব্যাঙের ডাক শুনলেই বাঙালির মনে সাড়া জাগে- বৃষ্টি হবে। আসলে তা-ই হয়ে থাকে। বর্ষায় ডাহুক ডাকে। মেঘের কোলজুড়ে রংধনুর সাত রং খেলা করে। কী অপূর্ব দৃশ্য! কী চমৎকার দেখা যায়! মন-যমুনায় তখন আনন্দের জোয়ার আসে। প্রকৃতি সাজে অপূর্ব সবুজের সাজে। বর্ষা মৌসুমে যখন চারদিক ভিজে ওঠে, তখন আমাদের মনও হয় সিক্ত। মৌন নীলের ইশারায় আমাদেরও প্রাণে জেগে ওঠে অজানা কামনা। আমরা হয়ে উঠি মনে-মননে বর্ষামুখর। এ ঋতুর বিচিত্র রূপ শহর ও গ্রামে ভিন্ন ধরনের। সাধারণত গ্রামে বর্ষার শোভা অতুলনীয়। কারণ, এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠঘাট-প্রান্তর এক সবুজ-শ্যামল গাছপালা ও ঝোঁপঝাড়। যেন ফিরে পায় তরতাজা নতুন জীবন।

বর্ষার যত আনন্দ-বিনোদন : বর্ষাকে ঘিরে নানা ধরনের খেলাধুলা দেখা যায় গ্রামে। যেমন- কাবাডি খেলার মূল সময় কিন্তু বর্ষাকালেই। বর্ষার সময়টাতে মাটি থাকে ভেজা কর্দমাক্ত। আজ হয়তো কৃত্রিম উপায়ে অ্যাস্টোটার্ব মাঠে কাবাডি খেলা হয়। কিন্তু যুগ যুগ ধরে আমাদের গ্রামগঞ্জে বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই তরুণ যুবক ও বৃদ্ধরাও লুঙ্গি কাছা দিয়ে নেমে গেছে কাবাডি খেলায়। বর্ষাকে ঘিরে আবার বেশ কিছু পেশা সজীব হয়ে ওঠে। যেসব নিচু ভূমিতে শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না, সেসব ভূমি বর্ষা এলেই পানিতে ভরে ওঠে। এটিই আমাদের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। পায়ে হাঁটা পথগুলো সব বর্ষার পানিতে ডুবে যায়। ফলে এসব ভূমি দিয়ে এক গ্রামের সঙ্গে আরেক গ্রামের নিকটতম হাট-বাজারের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় পানিবাহন নৌকা। তাই মৌসুমি মাঝিদের দেখা পাওয়া যায়। বর্ষার মনোহর সৌন্দর্য দর্শন থেকে শহুরে মানুষরা অনেকখানি বঞ্চিত। ইট-কাঠ-পাথুরে জীবনে বর্ষার আগমন তাদের কাছে তেমন আনন্দের নয়; বরং বর্ষা তাদের কাছে একধরনের উৎপাত ও বিরক্তিকর। তবে যারা ভাবুক মনের, বর্ষার সৌন্দর্য তাদের কাছে অপূর্বভাবেই ধরা দেয়। তাই কবির লেখনীর স্পর্শে বর্ষা পায় নতুন রূপ। বর্ষা দরিদ্রের দুয়ারে নিয়ে আসে হতাশা। তাদের ক্ষুদ্র গৃহস্থালি বর্ষার হাত থেকে রক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মাথা গোজার ঠাঁই নেই যাদের, তাদের কষ্টটাই বেশি। পলিথিন মোড়া সংসার নিয়ে তারা যাযাবরের মতো শুধুই আশ্রয় খুঁজে ফেরে।

আকাশে রহস্যঘেরা অন্ধকার : বর্ষাকাল মানেই আকাশ কালো করা ঘন মেঘের আনাগোনা, যখন-তখন ঝমঝমিয়ে পড়ে বৃষ্টি। পথেঘাটে কাদাপানি। ঘরে স্যাঁতসেঁতে ভাব। তাইতো কবি শামসুর রাহমান বর্ষার বৃষ্টি নিয়ে লিখেছেন, ‘হঠাৎ আকাশ সাদা মুখটি কালো করে, কালো মেঘে বুকটি ফুঁড়ে পানি পড়ে/ ঝর ঝর ঝর একটানা বৃষ্টি ঝরে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি ঝরে।’ বর্ষার বৃষ্টি তো অন্যতম। বর্ষার আকাশে রহস্যঘেরা অন্ধকারে নিবিড় হয়ে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। কখনও পুরো আকাশ ঘন মেঘে ছেয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না। আবার কখনও বিনা মেঘেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বৃষ্টি। নাগরিক যান্ত্রিক জীবনে বৃষ্টি প্রায়ই বেমানান। কিছুটা বিরক্তিকরও মনে হতে পারে। অরণ্য প্রকৃতির মাঝেই বৃষ্টি যেন বেশি মানানসই। তাইতো কবিগুরু রবীঠাকুর তার নৌকাডুবি উপন্যাসে বলেছেন, ‘বর্ষা ঋতুটা মোটেই ওপরে শহুরে মনুষ্য সমাজের পক্ষে তেমন সুখকর না, ওটা অরণ্য প্রকৃতির বিশেষ উপযোগী।’ শহুরে জীবনযাপনে বেশির ভাগের কাছে বৃষ্টি বিড়ম্বনারই নামান্তর। আবার কখনও কখনও কাঠফাটা রোদ্দুরে ভ্যাপসা গরমে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, এ বৃষ্টিই তখন সবার কাছে হয়ে ওঠে চরম আরাধ্য বা পরম পাওয়া।

সান্নিধ্য পাওয়ার ব্যাকুলতা : বৃষ্টিতে তপ্ত ধরণী মুহূর্তেই হয়ে ওঠে শীতল সজীব। সহসাই মন নেচে ওঠে ময়ুরের মতো করে। উচাটন মন তখন কিছুতেই ঘরে থাকতে চায় না। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মনের অজান্তেই গেয়ে ওঠে, ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন/ কাছে যাব, কবে পাব/ ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।’ বৃষ্টির দিনে কাঙ্ক্ষিত সেই প্রিয়জনকে কাছে পেলে বলে দেওয়া যায় হৃদয়ের কোণে জমিয়ে রাখা সব কথা। বৃষ্টি হলে সোহাগিনী বর্ষাকে আমরা ছন্নছাড়া বৃষ্টিবনে রাগ করি। ঠিক ওই পর্যন্তই। কিন্তু আজ নগরায়নের ফলে ও বৈশ্বিক উষ্ণতার পরিণতিতে বর্ষা দেখা দিচ্ছে নতুন রূপে বা নতুন চরিত্রে। তার ওপর আছে নগরজীবনে অপরিকল্পিত স্যুয়ারেজব্যবস্থা। এ দেশের মানুষের জীবনাচারের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে অনেক। যে লোকটি এখন গ্রামে থাকেন, তিনি আর তার গ্রামের ওপর নির্ভরশীল নন। নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন নগরজীবনে। অধিকাংশ মানুষের প্রিয় ফল পর্যন্ত এখন শহর থেকে কিনে নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়। তাই নগরজীবনের দুঃসহ জলাবদ্ধতা দেশবাসীকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশকে। বর্ষার সুবিধা-অসুবিধা থাকলেও বর্ষা অনেকেরই প্রিয় ঋতু। ধূলিমলিন প্রকৃতির চারদিক ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় বর্ষার পানি। ঝলমল করে ওঠে চারদিক। বর্ষার প্রত্যাশায় সবাই থাকে উন্মুখ।

অস্থির পরিবেশ ও প্রকৃতি : বর্ষায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু বর্ষণে জনজীবনে দুর্ভোগের পালা কোনো অংশে কম নয়। বর্ষাকালে রাস্তাঘাট গ্রাম-শহর-বন্দর সবখানেই বৃষ্টিজলে কদাকার হয়। দেশের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রবল বর্ষণ আর জোয়ারের পানির নিচে পথঘাট তলিয়ে যায়। পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যানজট সৃষ্টি হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ রাস্তায় চলাফেরা করতে হয়। গ্রামের চেয়ে শহরের অবস্থা বেশি খারাপ হয়। অনেক জায়গায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষায় মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যায়। মশা ও পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেয়। কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়ে। বাড়তি পানির চাপে অনেকের পুকুর ও খামারের মাছ চলে যায়। বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। শহরের অলিগলি এমনকি গ্রামেও বিভিন্ন কারণে রাস্তা কাটা হয়। অথচ যথাসময়ে তা সংস্কার করা হয় না। এগুলো এক ধরনের অপরাধ। কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও যেন দেখে না। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এতে কিছুটা হলেও রাস্তায় জনদুর্ভোগ কমবে। সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। বর্ষাকালে দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। এসব দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে বাঙালি। বর্ষাকালে বেশি বেশি গাছ লাগানো উচিত। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পায়।

দুর্ভোগ এড়াতে পরিকল্পিত ব্যবস্থা : দেশের অনেক স্থানেই সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা রয়েছে। এগুলোতে এমনিতেই যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়। তার ওপর খানাখন্দ। রাস্তায় পানির নিচে লুকিয়ে থাকা গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। পানি নিষ্কাশনের দুর্বল ব্যবস্থার কারণে সড়কে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। পলিথিনের অপব্যবহার ও যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে এ অবস্থাকে আরও প্রকট করা হচ্ছে। পানিনিষ্কাশন আরও দুর্বল হচ্ছে। সরকার তথা কর্তৃপক্ষের একান্ত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব নয়। অপরিকল্পিত ড্রেন দুরাবস্থা সৃষ্টির জন্য কম দায়ী নয়। অনেক স্থানে ড্রেনের স্লাভ ভাঙা থাকে। বিভিন্ন অপরিশোধ্য বর্জ্য নালা ও নর্দমায় জমে আটকে থাকে। ফলে পানি নামতে পারে না। তাই ঘন ঘন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে সড়ক ব্যবস্থাকে দুর্দশা থেকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত পানি সরানোর ব্যবস্থা জোরদার করার বিকল্প নেই। এসব সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে কোনোভাবেই জলাবদ্ধতাকে আটকানো যাবে না এবং জনদুর্ভোগ বেসামাল হয়ে উঠবে। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বর্ষাকাল প্রতি বছর আসে। প্রকৃতির এ নিয়মকে পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে উৎপাদন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাজে লাগাতে হবে। আর তাতে মানুষ দুর্বিষহ জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে কল্যাণময় এক আলোকিত জীবন পাবে। বর্ষণের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

বাঙালির প্রাণে নতুন জাগরণ : দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়িবাঁধ ছিঁড়ে বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। পানি নামার সীমাবদ্ধতার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আবার নদী ও খাল দখল করে অনেকেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেন। এতে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে পথেঘাটে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে অনেক সময় সড়ক ও সেতুর নির্মাণ কাজের বিলম্বিতার কারণেও ভোগান্তি হয়। বর্ষায় সড়কে ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একান্ত উদ্যোগ ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে প্রত্যাশিত আশা পূরণ হবে। ভোগান্তি যা-ই হোক, বর্ষার নিবিড় পরশে প্রকৃতির নতুন সাজে বাঙালির প্রাণে নতুন জাগরণ আসে। নতুন স্বপ্নে জেগে ওঠে বাঙালি। তখন আর দুর্ভোগের চিত্র মনে রাখে না। বর্ষার অপরূপ বাঙালি জাতিকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। মুগ্ধ হয় এর রূপ-প্রকৃতিতে।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত