ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কদমের হাসি

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
কদমের হাসি

বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল। কদম যেন বর্ষার দূত। আষাঢ়ের সঙ্গে কদমের সম্পর্ক নিবিড়। সাধারণত আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতেই কদম ফোটে। গোলাকার সাদা-হলুদ রঙের ফুলটি দেখতে ছোট বলের মতো। গাছ ভরে এ ফুলের সমাহার ঘটে। সেই মুহূর্তটি এক অপূর্ব সৌন্দর্যের। কদম ফুল নীপ নামেও পরিচিত। এ ছাড়া বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্পও কদমের নাম। এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয়ে। বিশ্বের নানা দেশে কদমগাছ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া। এর সংস্কৃত নাম কদম্ব। কদম্ব মানে হলো দযা বিরহীকে দুঃখী করেদ। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুল।

কদম বর্ষাকালের ফুল : বাংলাদেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় ফুল কদম। আদীকাল থেকেই কদম এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। কবিতা, গান, সাহিত্য উপমায় এ ফুলের ছড়াছড়ি। প্রাচীন বৈষ্ণব সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীম উদ্দীনের রচনায় কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। বর ও কনের মাথার টোপরে এ ফুলের প্রতিচ্ছবি ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। বর্ষার সৌন্দর্য কদম ফুলের সঙ্গে মিশে একাকার। মেঘের গর্জন ও বর্ষার প্রকোপ যত বেশি, কদম ফুলের সৌন্দর্য তত বেশি মোহনীয় হয়ে ধরা পড়ে। বর্ণে, গন্ধে, সৌন্দর্যে বর্ষার অন?্যতম ফুল কদম। হলদে শরীর নিয়ে সাদা সাদা বৃষ্টির ফোঁটার মতো পাপড়ি নিয়ে ফোটা মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত ফুটে থাকা ফুল গোলাকার আকৃতির। এটি মাত্র ফুল মনে হলেও আসলে এটি অনেক ফুলগুচ্ছের সমাহার। ফুলের পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের মুকুট। ফুলের ভেতরে থাকে ফল। পাপড়ি ঝরে ফলের আকৃতি গোলাকার বলে পরিণত হয়। গাছটি লম্বা ও বড় আকারের হয়। কাণ্ড ও গাছের ছাল অসংখ্য ফাটলে বিভক্ত থাকে।

ছায়াঘন ফুল ও গাছ : কদমগাছ দীর্ঘাকৃতি ও বহু শাখাবিশিষ্ট। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো। বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অৎস্র ও ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। এর বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। এ গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত হয়। শীতে কদমের পাতা ঝরে। বসন্তে কচিপাতা গজায়। সাধারণত পরিণত পাতা অপেক্ষা কচি অনেকটা বড়। কদমের কচিপাতার রঙ হালকা সবুজ। কদমের একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। এ ফুলের রং সাদা-হলুদে। তবে পাপড়ি ঝরে গেলে শুধু হলুদ রঙের গোলাকার বলের মতো দেখা যায়। এ গাছের ফল মাংসল, টক এবং বাঁদুর ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।

কদম বর্ষার অহংকার : গ্রামের অগভীর জঙ্গলে, রাস্তার ধারে ও বাড়ির আশপাশে এখনও গুটি কয়েক কদম গাছ চোখে পড়ে। বর্ষায় ফুলে ভরা কদম গাছ দেখতে অতুলনীয় সুন্দর। গাছের কাণ্ডের আর্থিক মূল্য আছে। পাতার রস ছোটদের কৃমিনাশক। শ্বেতসহ বিভিন্ন রোগে কবিরাজরা এ গাছের পাতা ও ছাল ব্যবহার করেন। কদম ফুল সৌন্দর্যে সেরাই নয়, এ ফুলের গাছের আর্থিক মূল্যও আছে। এখনও ঢাকা থেকে ব?্যবসায়ীরা এসে এ গাছ কিনে নিয়ে যান। কদমগাছ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। অবাধে কেটে ফেলায় সবুজ পাতার মধ্যে চিরচেনা কদম ফুল এখন তেমন চোখে পড়ে না। কদম ছাড়া বর্ষার রূপ কল্পনা করা যায় না। কদম বাংলাদেশের বর্ষার অহংকার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি এবং বেসরকারি ও ব?্যক্তিগত উদ্যোগে কদমগাছ রোপণ করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত