ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শরতের রূপ

তাবাসসুম মাহমুদ
শরতের রূপ

সাদা কাশফুল, শিশির ভেজা দুর্বাঘাস আর শিউলি ফুল দেখলেই বুঝতে পারি, শরৎ এসেছে। বর্ষা শেষে প্রকৃতি অপরূপ রূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। এই রূপ দেখে যুগে যুগে মুগ্ধ হয়েছেন কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকরা।

তাই শরতের বর্ণনা উঠে এসেছে বাংলা ছড়া, কবিতা আর গানে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শরতের রঙটি প্রাণের রঙ। অর্থাৎ তাহা কাঁচা, বড় নরম। রৌদ্রটি কাঁচা সোনা, সবুজটি কচি, নীলটি তাজা। এজন্য শরতে নাড়া দেয় আমাদের প্রাণকে, যেমন বর্ষায় নাড়া দেয় আমাদের ভেতর-মহলের হৃদয়কে, যেমন বসন্তে নাড়া দেয় আমাদের বাহির মহলের যৌবনকে।’ তিনি শরৎকে তুলনা করেছেন শিশুর সঙ্গে। লিখেছেন, ‘তার এই হাসি এই কান্না। সেই হাসিকান্নার মধ্যে কার্যকারণের গভীরতা নেই, তাহা এমনি হালকাভাবে আসে এবং যায় যে কোথাও তার পায়ের দাগটুকু পড়ে না, জলের ঢেউয়ের উপরটাতে আলোছায়া ভাইবোনের মতো যেমন কেবলই দুরন্তপনা করে; অথচ কোনো চিহ্ন রাখে না।’

শরতের বন্দনা : শরতের কাশফুল, শিউলিফুল আর শুভ্র মেঘমালার রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু গেয়ে উঠেছেন- আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ/ আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা/ নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে/ সাজিয়ে এনেছি ডালা। শরতের শিউলিফুল নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গান রচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন- শিউলিতলায় ভোরবেলায়/ কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।/ শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে/ খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা। শরৎ শুধু সৌন্দর্যের ঋতু নয়, শরৎ বাঙালির উৎসবেরও ঋতু। শরৎ এলে বাংলাদেশের বিলে-ঝিলে ফুটে থাকে শাপলা ফুল। সবুজ সতেজ পাতায় ঘেরা গাছের ডালে শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মাঠ ভরা ধানখেত হেসে ওঠে সূর্যের সোনালি আলোয়। তাইতো পল্লীকবি জসীম উদ্দীন বলেছেন- শরৎ সে কবে চলে গেছে তার সোনালি মেঘের ছটা,/ আজও উড়িতেছে মোর এই খেতে ধরিয়া ধানের জটা।/ মাঝে মাঝে এর পাকিয়াছে ধান, কোনখানে পাকে নাই,/ সবুজ শাড়ির অঞ্চলে যেন ছোপ লাগিয়াছে তাই।

শরতের যত ফুল : শরতে ফোটা কাশফুল নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- সবে তো এই বর্ষা গেল শরৎ এলো মাত্র,/ এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরল তোমার গাত্র।/ ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়,/ হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশবনের ওই ধারটায়। শরৎ আর কাশফুল নিয়ে বাংলায় কত ছড়া, কবিতা বা গান লেখা হয়েছে, তার কোনো হিসেব নেই। কবি আল মাহমুদ লিখেছেন- ভাসছে হৃদয় কাশের ফুলে ঘাস যেখানে/ ঘন হয়ে ছড়িয়ে আছে কুঞ্জবনে/ আসছে শরৎ আবার দেখ ভাসছে হৃদয়/ হাসছে একা কাশের ফুলে সঙ্গোপনে।

তবে শরতে শুধু কাশফুলই যে ফোটে, তা কিন্তু নয়। বরং শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, বকফুল, মিনজিরি, কলিয়েন্ড্রা, হাসনাহেনা, দোলনচাঁপা, বেলী, ছাতিম, জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জরি, শ্বেতকাঞ্চন, মল্লিকা, মাধবী, নয়নতারা, কল্কে, স্থলপদ্ম, কচুরি, সন্ধ্যামণিসহ কত যে ফুল ফোটে গাছে গাছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। এ ছাড়া বর্ষার জল পেয়ে গাছপালাও এ সময় নতুন সাজে সেজে ওঠে। গাছে গাছে সবুজ পাতা আর রঙবেরঙের ফুলের কারণেই হয়তো শরৎকালকে বলা হয় ঋতুর রানি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত