ঢাকা বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নববর্ষে ইসলামের নির্দেশনা

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
নববর্ষে ইসলামের নির্দেশনা

মহান আল্লাহর স্মরণে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যথাযথভাবে ইবাদত ও জিকির করার দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। আল্লাহর স্মরণে জীবন পরিচালিত হলে ঈমান নবায়ন হয়। ফলে জীবন-মৃত্যু প্রশান্তিপূর্ণ ও সৌভাগ্যময় হয়। নতুন বছরকে ঈমান নবায়নের সূচনায় পরিণত করা চাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈমান নবায়ন কর।’ সাহাবিরা জানতে চাইলেন, ‘কীভাবে তা নবায়ন করব?’ তিনি বললেন, ‘বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাক।’ (মুসনাদে আহমদ : ৮৭১০)। আল্লাহর কাছে ঈমান নবায়নের প্রার্থনা করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের হৃদয়ে ঈমান জীর্ণ হয়, যেমন জীর্ণ হয় পুরোনো কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর; যেন তিনি তোমাদের হৃদয়ে তোমাদের ঈমান নবায়ন করে দেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ৫)।

গোনাহ থেকে তওবা : অতীত মন্দ কাজের জন্য বিশেষভাবে অনুতপ্ত হওয়াকে তওবা বলে। বিশুদ্ধ তওবা হলো, কৃত গোনাহের জন্য অনুশোচনা করা, আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে এসব গোনাহ না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘গোনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো হয়ে যায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২৫০)।

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘তওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো, যার কোনো গোনাহ নেই।’ (সুনানে বাইহাকি : ২০৩৫০)। যদি গোনাহ করার যোগ্যতা মানুষের মাঝে না থাকত, তাহলে মানবসৃষ্টির কোনো প্রয়োজনই ছিল না। শুধু ইবাদতের জন্য ফেরেশতারাই যথেষ্ট ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ!

যদি তোমরা মোটেও গোনাহ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন এবং এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গোনাহও করবে, তওবা-ইস্তিগফারও করবে। তারপর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম : ২৭৪৯; মুসনাদে আহমদ : ৪০৪২)। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও বলতেন, ‘মাঝেমধ্যে আমার অন্তর মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়, তাই প্রতিদিন আমি ১০০বার পর্যন্ত ইস্তিগফার করি।’ (মুসলিম : ২৭০২)।

আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা : নতুন বছরের আগমনে মহান আল্লাহর কাছে ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ কামনা করা চাই।

আল্লাহই বান্দার সুখ-শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ দান করেন। কোরআনে এসেছে, ‘আমি কি তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে অন্যদের উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে ফেলতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট হব।’ (সুরা ইয়াসিন : ২৩-২৪)।

জীবনের হিসাব-নিকাশ : আল্লাহতায়ালা মানুষকে সুনির্দিষ্ট একটি সময়কাল দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এ সময়কালের কোনো হেরফের বা কমবেশি হয় না। যার জন্য যতটুকু সময় নির্ধারিত, ততটুকু ফুরিয়ে গেলেই জীবন শেষ হয়ে মৃত্যুর ডাক এসে যায়। কাজেই পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশের মুখোমুখি হওয়ার আগে পৃথিবীতেই জীবনের হিসাব-নিকাশ করে নিতে হবে। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘সৌভাগ্যবান কারা?’ তিনি বললেন, ‘যারা দীর্ঘায়ু লাভ করে তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে।’ পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, ‘দুর্ভাগা কারা?’ তিনি বললেন, ‘যারা দীর্ঘায়ু পেয়ে তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলহীন অতিবাহিত করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৩২৯)। তাই তো ওমর (রা.) বলতেন, ‘তোমরা নিজেদের হিসেব করে নাও তোমাদের হিসেব নেওয়ার আগে।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৪৫৯)।

অতীত থেকে শিক্ষা লাভ : নতুন বছর আগমনকালে বিগত বছরের পর্যালোচনা করা খুবই যৌক্তিক বিষয়। অতীতের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে নতুন বছরে নির্ভুল এবং পাপমুক্ত জীবন কাটানোর জন্য প্রত্যয়ী হওয়া চাই। মানবেতিহাসে সংঘটিত সব ঘটনাই মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। মানুষের উচিত, অতীত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি বা জাতিকে এ জগতেই কোনো না কোনোভাবে প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হয়েছে। কোরআন-হাদিসে বিভিন্ন নবী-রাসুল ও অতীত অনেক জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে অতীত ইতিহাসের সত্য ও শিক্ষার দিকে ধাবিত করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের ঘটনায় বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সুরা ইউসুফ : ১১১)।

নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা : নতুন বছর আগমনকালে নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা সফলতার পথ দেখায়। আর সঠিক নিয়ত কাজের গতি বাড়ায়। কাজের শুরুতে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বোখারি : ১)। নতুন বছর সামনে রেখে নিয়ত ঠিক করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

আমল ও আখলাক নিয়ে ঈমানদারদের প্রথম পরিকল্পনা হওয়া চাই। বছরের প্রথম দিন থেকে নামাজ-রোজাসহ ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো যথার্থভাবে আদায়ের পরিকল্পনা, কোরআন তেলাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের পরিকল্পনা, পরোপকার, দান-সদকা বৃদ্ধির পরিকল্পনা ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ২৬)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত