
আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। ক্রেতাদের ধারণা ছিল, আমদানির কারণে দাম কমবে। সে আশায় গুড়েবালি। ভারত থেকে কম দামে আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে দেশীয় নতুন পেঁয়াজের দামে। আবার দেশি পেঁয়াজও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে আমদানির সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা করে আমদানিকারকরা ভোজ্যতেলের নতুন দাম ঘোষণা করলেও বাজারে নতুন দরের তেল দেখা যায়নি।
গতকাল বুধবার ঢাকার কিছু কিছু দোকানে ভারতীয় বড় আকারের পেঁয়াজ দেখা গেছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ। দেশীয় পুরোনো পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা দরে। দুই দিন আগে মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজি ৭৫-৮০ এবং পুরোনো পেঁয়াজের কেজি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসেবে দুই দিনের ব্যবধানে ফের বাড়তি দরের অবস্থানে পৌঁছেছে মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম।
গত এক-দেড় মাস আগে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। স্থানীয় কৃষকের সুরক্ষায় আমদানির অনুমতি দেবে না বলে কঠোরতা দেখালেও শেষ পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে গত রোববার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর পরদিন থেকেই ভারত থেকে আমদানি শুরু হয় পেঁয়াজ। আমদানির খবরে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমেছিল। কিন্তু যে উদ্দেশ নিয়ে আমদানির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে তা সফল হয়নি।
ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি কেন জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে খুব কম। শ্যামবাজারে অল্প কয়েকটি আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানেই কেনা পড়ছে ১১২-১১৫ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। এ জন্য ১২০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না।
আমদানি করা পেঁয়াজের এমন দামে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বিস্মিত। কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ রুপির মতো। তাহলে সেগুলো বাংলাদেশে এসে এত দাম হয় কীভাবে? দাম বেশি হওয়ায় তিনি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না বলে জানান।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজের দাম যদি এতই বেশি হয়, তাহলে আমদানি করে কী লাভ হলো? কতো দামে আমদানি হয়েছে, এর সঙ্গে কতো শুল্ক রয়েছে, এসব খরচ যোগ করে দেশে কতো দরে বিক্রি হওয়া উচিত তা সরকারের খোলাসা করতে হবে। এদিকে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে কিছুটা। বেশ কয়েকটি সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে রয়েছে। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে বরবটি, বেগুন ও উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা কমে ঢ্যাঁড়শ ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। ফুল ও বাঁধাকপির দাম আরও কমেছে। মাঝারি আকারের এই দুটি সবজির পিস কেনা যাচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০-৫০ টাকায়।
কাঁচামরিচের দাম আরও কমেছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে মরিচের কেজি ছিল ১৮০-২০০ টাকা। গতকাল প্রায় চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা দরে। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বেড়েছে। ফলে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম অর্ধেকে নেমেছে। এখন প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ৮০-১০০ টাকা। পুরোনো আলু কেনা যাচ্ছে ২৪-২৫ টাকা দরে। সবজির মতো ডিম ও মুরগির বাজারও কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা কমেছে। ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যাচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। এছাড়া মুরগির দর কেজিতে কমেছে ১০ টাকার মতো। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৫০-১৬০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৫০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-মাংসসহ অন্য নিত্যপণ্যের বাজার আগের মতোই স্বাভাবিক দেখা গেছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা করে আমদানিকারকরা ভোজ্যতেলের নতুন দাম ঘোষণা করলেও বাজারে নতুন দরের তেল দেখা যায়নি।