মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি)। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ফরাসি ক্লাবটি। তার আগে লিগাসহ ঘরোয়া চার শিরোপা বগলদাবা করেছিল লুইস এননিরেকের শিষ্যরা। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অবধি দুর্দান্ত ছিল তারা। কিন্তু ফাইনালে সব হিসাব-নিকাশ পুরোপুরি উল্টে গেল। আকাশে উড়তে থাকা পিএসজিকে টেনে মাটিতে নামিয়ে আনল ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। বাংলাদেশ সময় গত রোববার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে নতুন ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পিএসজিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হল এনজো মারেসকার শিষ্যরা। ২০২১ সালে আগের ফরম্যাটের ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছিল চেলসি। চার বছর পর এ টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় শিরোপা ইংলিশ জায়ান্টদের। ফাইনালের আগে চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেছিলেন, ফুটবলকে দাবা খেলার মতো মনে করি আমি। প্রতিপক্ষ যখন মুভ করবে, তখন পাল্টা কিছু দিতে হবে। ফাইনালটাও হবে দাবা খেলার মতো। সে দাবার চালেই কিস্তিমাত করল চেলসি। পিএসজি একটা সময় ৭০ শতাংশ বলের দখল রেখে খেললেও গোল করে কাজের কাজটা সেরেছে ইংলিশ দলটিই। বিরতির আগেই চেলসি এগিয়ে গিয়েছিল ৩-০ গোলে। জোয়াও নেভাস ৮৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় পিএসজি। চেলসি লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেইয়ার টেনে তাকে ফেলে দিয়ে লাল কার্ড দেখেন নেভেস। একজন কম নিয়ে বাকি সময়টা আর পেরে উঠেনি তারা। চেলসি এগিয়ে যায় ২২তম মিনিটে। গোলরক্ষকের লম্বা করে বাড়ানো বল ধরে বক্সে ঢুকে মালো গিস্তোর শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর এ ডিফেন্ডার খুঁজে নেন পালমারকে। বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের নিচু শটে গোল করেন কোল পালমার। এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে নকআউটে ১৪ ম্যাচের ১৩টিই জিতেছিল প্রথমে গোল করা দল।
সে আত্মবিশ্বাসেই হয়তো আরও বেশি করে জেগে উঠে চেলসি। ৩০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমারই। কুলিং ব্রেকের পর মাঝমাঠে বল হারায় পিএসজি। প্রতি আক্রমণ থেকে সেন্টার ব্যাক লেভি কোলউইলের পাস পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে পিএসজির বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন পালমার। জায়গা বানিয়ে চোখ ধাঁধানো টার্নে নিচু শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন তিনি। পিএসজি যেমন ক্লাব বিশ্বকাপে গোল উৎসব করেছে (রিয়াল ৪-০, আতলেতিকো ৪-০, মায়ামি ৪-০, বায়ার্ন ২-০) তেমনি রক্ষণেও ছিল দূর্দান্ত। ফাইনালের আগে তারা গোল হজম করেছিল কেবল একটি। সে পিএসজির জালেই প্রথম ৩০ মিনিটে বল জড়াল দুইবার!
চেলসি গ্রুপ পর্বে ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে হেরেছিল ৩-১ গোলে। এরপর নকআউটে বেনফিকাকে ৪-১, কোয়ার্টার ফাইনালে পালমেইরাসকে ২-১ আর সেমিফাইনালে ফ্লুমিনেন্সকে হারায় ২-০ গোলে। দিন যত গড়িয়েছে নিজেদের তত বেশি মেলে ধরেছিল তারা। আর ফাইনালে খেলল নিজেদের সেরাটা। প্রেসিং ফুটবলে পিএসজিকে নাস্তানাবুদ করে ৪৩ মিনিটে তারা এগিয়ে যায় ৩-০ ব্যবধানে। কোল পালমার বল পেয়েছিলেন মাঝমাঠে, তার পাশে তখন ছিল না পিএসজির কেউ। পালমারের বাড়ানো পাসে ১০ গজ বাইরে থেকে করা ক্লিপসে বল জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠান জোয়াও পেদ্রো। চেলসির হয়ে তিন ম্যাচে পেদ্রোর গোল হলো তিনটি।
কনফারেন্স লিগ ফাইনালেও চেলসির শিরোপা জয়ের পথে জোড়া গোল করিয়েছিলেন পালমার। এ মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ১৮ গোলের পাশাপাশি ১৪টি অ্যাসিস্ট তার। ম্যাচ শেষে পালমার সম্প্রচারক ডিএজেডএনকে বলেন, ‘ম্যাচের আগে সবাই আমাদের নিয়ে সন্দেহে ভুগেছে। আমরা এটা জানতাম, তাই এভাবে খেলতে পেরে ভালো লাগছে। আমাদের কোচ দারুণ পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। আমাকে যতটা সম্ভব মুক্তভাবে খেলার সুযোগ দিয়েছেন। গোল করেছি এর প্রতিদানে। ২০১১ সালে পিএসজি কাতারি মালিকের অধীনে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত তিনবার বিরতির আগে ন্যূনতম ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ল। লিঁও ও এঁমসের বিপক্ষে আগের দুবার জিতলেও এবার পারেনি তারা।
৫৩ মিনিটে অসাধারণ সেভ করে চেলসিকে বাঁচান গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজ। উসমান দেম্বেলের ছয় গজ দূর থেকে নেওয়া শট অবিশ্বাস্যভাবে ফেরান তিনি। বিবিসি এ সেভ নিয়ে লিখেছে, ওয়ার্ল্ড টাইটেল উইনিং সেভ। ৬৭ মিনিটে জোয়াও পেদ্রোকে তুলে নেন চেলসি কোচ। তাতে গোল্ডেন বুট জেতার স্বপ্নটা ভেঙে যায় তার। তবে শিরোপা জিতে আক্ষেপটা নিশ্চয়ই ভুলেছেন তিনি। শেষ বাঁশি বাজার পর চেলসির কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন এনরিকে ও দোন্নারুম্মা। তখন চেলসির পেদ্রোর কাঁধ ধরতেও দেখা গেছে এনরিকেকে!