
নেপাল এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জিতে লাল সবুজের পতাকা গায়ে জড়িয়ে ছিলেন তায়কোয়ান্দোকা দিপু চাকমা। সেই দৃশ্য দেখে গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তাদের। যখন একটি স্বর্ণপদকের আশায় চাতক পাখির মতো ছিলেন বাংলাদেশের কর্মকর্তা, ঠিক তখনি তায়কোয়ান্দোর পুমসে থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত পদকটি এনে দেন দিপু চাকমা। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন লাল সবুজের কর্তারা। এরপর আরও ১৮টি স্বর্ণ এলেও খরা কাটানো দিপুর স্বর্ণজয়ের মূহুর্তটি আজও ভুলতে পারেননি ক্রীড়াবিদ, কর্মকর্তারা। সেই দিপু এবার শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার হলেন জাতীয় তায়কোয়ান্দোর ক্যাম্প থেকে। ফেডারেশনের অভিযোগ, দক্ষিণ কোরিয়ান নতুন কোচ জুন গিউ চোইয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো, তায়কোয়ান্দোকাদের মধ্যে গ্রুপি, ওভারনাইট সজাগ থাকা এবং বাজে নেশার কারণেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দিপু।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল এরশাদুল হক বলেন, ‘দিপু ক্যম্পে ওভারনাইট সজাগ থাকত। তায়কোয়ান্দোকাদের মধ্যে গ্রুপিং করত। গাঁজা খেত। পারিবারিক মামলায় হতাশাও তাকে ঝেকে ধরেছিল। এত কিছুর পরও তাকে রাখা হয়েছিল ক্যাম্পে। কিন্তু ১৩ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কোচ আনার পর সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়। আজেবাজে কথা বলেছে। যা একজন ক্রীড়াবিদসুলভ আচরন নয়। তাই তাকে ক্যাম্প থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল। তাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সে তা কাজে লাগাতে পারেনি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দিপু পাল্টা অভিযোগের বল ঠেলে দেন ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের কোর্টেই, ‘১৪ অক্টোবর নতুন কোচের আসা নিয়ে এমনিতেই একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে। সেখানে অনেকে মজা করে অনেক কথা লিখেছিল। আমিও তাদের জবাবে মজার ছলেই উত্তর দিয়েছিলাম। পরদিনতো আমাকে অব্যাহতিই দিয়ে দেয় ক্যাম্প থেকে।’
তিনি যোগ করেন, ‘আসলে এসব কিছু না, কমিটি বদলের পর খেলার উন্নতি করার কথা না ভেবে গেল ২৮ বছরে কে কি করেছে সেই সব নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছেন উনারা। শুধু তাই নয় আগের কমিটির সঙ্গে আমাদের যত ছবি ছিল এচিভমেন্টের পর সেইসবও সড়িয়ে ফেলা হয়েছে ফেডারেশন থেকে। তাছাড়া দূর্নীতির অভিযোগে গত ১৫-২০ বছর ধরে ক্যাম্পের বাহিরে থাকা প্রফেসর চঞ্চল স্যারকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’ ক্যাম্পের বিষয়ে দিপুর অভিযোগ, ‘প্রতিদিন খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বরাদ্দ ছিল ৩৫০ টাকা করে। সেই হিসেবে এক মাসে খেলোয়াড়দের হাতখরচ বাবদ ভাতা পাওয়ার কথা সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আর খাবার-দাবার প্রতিদিন ৭৫০ টাকা করে। এককালীন যাতায়াত ভাতা ৩০০০ টাকা। এবং আনুসাঙ্গিক আরও যা আছে যেমন, ড্রেস, প্যাকেজের কিটসহ আরও যা যা লাগে সেইগুলোর জন্য প্রতিজনের জন্য ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে এইগুলো আমাদের কিছুই দেওয়া হত না। আমি কয়েকবার প্রতিবাদ করেছিলাম এটা নিয়ে। যে প্রথম মাসে ৫ হাজার টাকা কেনো দেওয়া হল আরও বেশি তো আমাদের পাওনা সেই সময় ফেডারেশনের কর্তারা বিভিন্ন ইস্যু দেখাত। পরবর্তীতে খেলোয়াড়রা সবাই প্রতিবাদ করে চাপ দেওয়ার কারণে উনারা ভাতাটা নয় হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু করলো। এসব ব্যাপারে আমি সোচ্চার ছিলাম বলেই আজ আমার এই দশা।’