
বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দ্বাদশ আসরের উদ্বোধন হবে আজ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক সিলেট টাইটান্স মুখোমুখি হবে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে। এবারের আসরে ৬টি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশগ্রহণ করছে। বেশ কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। গত আসরে সমালোচনার মুখে থাকা চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি এবার নতুন মালিকানায় খেলছে। তবে শুরুতেই তারা বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে তারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিতে গড়িমসি করে। এরপর ব্যাংক গ্যারান্টি দিতেও টালবাহানা। নিলামের আগে চট্টগ্রাম রয়্যালসকে নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। তবুও তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল, বিপিএলে দল বাছাই করতে পারবে এবং দল মাঠে নামাতে পারবে। নিলামে নাঈম শেখের পারিশ্রমিক উঠে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ বিডিং করে নাঈকে দেল নেয়। কিন্তু বল মাঠে গড়ানোর ৪৮ ঘণ্টা আগে হুট করেই চট্টগ্রামের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক আবদুল কাইয়ুম। গত দুদিন ধরে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। দলের একাধিক বিদেশি ক্রিকেটার, কোচ চট্টগ্রামে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিস্থিতি অনেকটাই অনুমান করা যাচ্ছিল কী হতে যাচ্ছিল। সেটাই হয়েছে। বিপিএল শুরুর আগের দিন মালিকানা ছেড়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্বাধিকার। ই-মেইলকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। তারা জানিয়েছে, আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়াতে বিপিএল থেকে সরে যেতে হচ্ছে তাদের। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক, অন্যান্য খরচসহ যে টাকা ব্যয় করতে হতো সেটা তাদের কাছে নেই এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রত্যাশিত সাড়া তারা পাননি।
ট্রায়াঙ্গুল সার্ভিসেস নামে একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম রয়্যালস দলটি কিনেছিল। শুরু থেকেই তাদের আচরণ এবং কার্যকালাপ পছন্দ হচ্ছিল না বিসিবির। কিন্তু বারবারই তারা সময় চাওয়ায় বিসিবিও অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়ে। এবার বিসিবিকেই সেই দলের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম রয়্যালস জানিয়েছে, দল পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে নেই। এ অবস্থায় দল পরিচালনা করা ঠিক না। আমরা আলোচনা আগেই করেছি কোনো দল যদি শেষ মুহূর্তে বিসিবির ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল না করে তাহলে বিসিবি দল চালাবে। সেটাই সিদ্ধান্ত।’ বিপিএলের আগে পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ টাকা পাওয়ার কথা ছিল ক্রিকেটারদের। চট্টগ্রামের কোনো ক্রিকেটার এখনও এক টাকাও পাননি। ডি/এর টাকাও বকেয়া পড়েছে। জমতে শুরু করেছে হোটেলের বিল।
এদিকে বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটি থেকে পদত্যাগ করে হাবিবুল বাশার সুমন এখন বিসিবির হয়ে চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজির টিম ডিরেক্টর হয়েছেন। দলটির প্রধান কোচ হয়েছেন মিজানুর রহমান বাবুল ও ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করবেন নাফীস ইকবাল। বিপিএলে আসরের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ব ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ট্রায়াঙ্গেল সার্ভিসেস লিমিটেড’ পাওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নিয়ে নানা জল্পনা ও স্ক্রুটিনি চলছিল। যদিও তারা সময়মতো তাদের অংশগ্রহণের ২ কোটি টাকা জমা দিয়েছিল, কিন্তু ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করতে বেশ কয়েকবার তারিখ করে। পরবর্তীতে গত ৯ ডিসেম্বর বোর্ড একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে, চট্টগ্রাম রয়্যালস তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছে। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজিটি অনুমোদিত আর্থিক দলিলের মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যাংক গ্যারান্টির টাকাও জমা দিয়েছে।
এদিকে, আজ নোয়াখালী এক্সপ্রেসের বিপক্ষে উদ্বোধনী দিনে ম্যাচ নির্ধারিত থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে আসতে পারেনি। এমনকি তারা কয়েক দফা তাদের কোচিং প্যানেলও পরিবর্তন করেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অনেক বিদেশি খেলোয়াড় শেষ মুহূর্তে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য টুর্নামেন্ট শুরুর আগে খেলোয়াড়দের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করার যে নিয়ম রয়েছে, চট্টগ্রাম সেটিও এখন সম্পন্ন করতে পারেনি। এই অবস্থায় বিসিবির দায়িত্ব নেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না।