ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- বিশ্বাস করা, স্বীকার করা ও আস্থা স্থাপন করা। শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান হলো, মহানবী (সা.) আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে দ্বীন হিসেবে অপরিহার্য যেসব বিষয় নিয়ে এসেছেন, সেগুলো মনেপ্রাণে গ্রহণ করা ও মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ়বিশ্বাস ও প্রত্যয় ব্যক্ত করার নাম। ঈমান আনার কারণে ঈমানদার ব্যক্তি চিরকালের জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। পক্ষান্তরে ঈমান বর্জনকারী কাফের ও বেঈমান লোক অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সুরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করল? বস্তুত যারা ঈমানদার, এ সুরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে।’ (সুরা তওবা : ১২৪)।
কোরআনে আছে, ‘যখন তাদের কাছে কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়।’ (সুরা আনফাল : ২)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত, তা মর্মার্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা এবং সে অনুযায়ী আমল করার ফলে ঈমানের উন্নতি অগ্রগতি ঘটে; অর্থাৎ ঈমানের নূর, আস্বাদ ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। আলি (রা.) বলেন, ‘যখন ঈমান অন্তরে প্রবেশ করে, তখন একটি শ্বেত বিন্দুর মতো দেখায়। অতঃপর যতই ঈমানের উন্নতি হয়, সেই শ্বেত বিন্দু ততই সম্প্রসারিত হয়ে ওঠে। এমনকি শেষ পর্যন্ত গোটা অন্তর আলোতে ভরপুর হয়ে যায়।’ (তাফসিরে মাজহারি : ৪/৩২৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানের সত্তরের ওপর শাখা আছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো, (দিলের বিশ্বাসের সঙ্গে) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অন্যতম শাখা।’ (মুসলিম : ১/৪৭)। পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করলে শুধু জ্ঞানের পরিধিই বড় হয় না; বরং আল্লাহর প্রতি মুমিনের ঈমানও আরও বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারাই আল্লাহর কথা আলোচিত হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, আর তাদের কাছে যখন তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে, আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল : ২)। নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মুমিনের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। নবীজি হলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মডেল। দুনিয়া-আখেরাতের সফলতা অর্জনের নবীজি (সা.)-এর অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। নবীজি (সা.)-এর অনুসরণে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করবেন আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)। ইসলামের বিধি-বিধান, আকিদার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও এর ওপর আমল মানুষের দুনিয়া-আখিরাতকে সুন্দর করে, ঈমানকে মজবুত করে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রাখো যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল রয়েছেন, সে যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিত, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন।’ (সুরা হুজুরাত : ৭)। ‘ইহসান’ মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, নবীজি (সা.)-এর ভাষায় ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসান হলো, আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ (বোখারি : ৫০)।