দিন তিনেক আগে শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাঠে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। লঙ্কা থেকে ফিরে বিশ্রামের সুযোগ পায়নি টাইগাররা। এবার ঘরের মাঠে বাইশগজে ‘পরীক্ষা’ দিতে নামছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রতিপক্ষ এশিয়ার ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি পাকিস্তান। আজ সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সালমান আগা খানের দলের মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা। সাফল্যর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় বাংলাদেশ। সদ্যই শ্রীলঙ্কার মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। হার দিয়ে শুরুর পর শেষ দুই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টির আগে শ্রীলঙ্কা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ এবং তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছে বাংলাদেশ। নিজেদের সেরা পারফরমেন্স প্রদর্শন করে সাফল্য আদায় করে নিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে পাকিস্তান ভিন্ন দল। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য খুব বেশি নেই। ভারতের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্যের হার খুবই খারাপ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে টাইগাররা জয় পেয়েছে মাত্র তিনটিতে এবং হেরেছে ১৯ ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছরের মে মাসে পাকিস্তানের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সিরিজের সবগুলো ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশ হয় টাইগাররা। তাই ঘরের মাঠের সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য প্রতিশোধের মিশন। শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং উন্নতি চোখে পড়ার মতো ছিল। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং পারভেজ হোসেন গত কয়েকটি সিরিজে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে পাকিস্তান সিরিজ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ পাকিস্তানের বোলিং লাইন আপ অনেক বেশি শক্তিশালী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের দল নিয়েই পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দলে কোনো পরিবর্তন আনেনি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে জয় পাওয়া একাদশ নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামতে পারে বাংলাদেশ।
ম্যাচের আগের দিন গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলছিলেন, ‘এই মুহূর্তে জিনিসটা খুবই চ্যালেঞ্জিং, যারা উইকেট বানাচ্ছে তাদের জন্য। আবহাওয়ার ওপর তো আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনি যদি দেখেন, গত ৩-৪ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। যে মানুষটা পরিশ্রম করে আপনাকে উইকেট বানিয়ে দেবে, সেই মানুষটার হাতেও ঐ সময় ছিল না। এই মুহূর্তে আমাদের উইকেট নিয়ে ভাবার কিছু নেই। উইকেট পাকিস্তানের জন্য যা থাকবে, বাংলাদেশ দলের জন্যও একই থাকবে।’ লিটন অবশ্য পাকিস্তান সিরিজে আত্মবিশ্বাস রাখার কথা বলছেন, ‘যখন পাকিস্তানে খেলতে যাই, একই চিন্তাধারা ছিল যে জেতার জন্য খেলব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিততে পারিনি। কিছু ভুল করেছিলাম। শ্রীলঙ্কা সিরিজে ভালোভাবে কামব্যাক করেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এটা ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন প্রতিপক্ষ। নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলতে হবে। আত্মবিশ্বাস সাহায্য করবে। তবে মনোযোগ ধরে রাখা বেশি জরুরি।’
বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বাস সিরিজ জয় নিয়ে, ‘অবশ্যই, যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। সেই চেষ্টাই করব। নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। হোম কন্ডিশন বলে আমরাই ভালো ক্রিকেট খেলব তা না। পাকিস্তান ভালো দল, তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই বিপিএল খেলেছে। আমাদের কন্ডিশন সম্পর্কে জানে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলার।’ বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দলের ক্রিকেটাররা ভালো করেই জানেন নিজেদের সম্পর্কে দাবি লিটনের, ‘এটা তো খুব ভালো জিনিস। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মজাই এটা যে, বিশ্বের সব ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলার সুযোগ থাকে, বন্ধুত্ব করার সুযোগ থাকে। আপনি যদি শুধু জাতীয় দলে আটকে থাকেন, তাহলে কিন্তু বাইরের ক্রিকেটার সম্পর্কেও জানবেন না, ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারবেন না। আমার মনে হয়, এটা দুই দিক থেকেই কাজে দিবে।’
পাকিস্তান দলের স্কোয়াডে ৯জন ক্রিকেটার আছেন, যাদের বিপিএল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ফলে তাদের থেকে ভালো ধারনা নেওয়ার সুযোগ আছে টিম ম্যানেজমেন্টের। যদিও এটাকে বড় কোনও ইস্যু মনে করেন না লিটন, ‘যে কোনও দলকে হারানোর মতো মানসিকতা আমাদের আছে। আমরা সেই চেষ্টাই করবো। তবে আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তার মানে এই না যে, হোম কন্ডিশন বলে আমরাই ভালো ক্রিকেট খেলবো। আগেও বলেছি, পাকিস্তান ভালো দল। তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই বিপিএল খেলে থাকে। তারাও সেই কন্ডিশনটা সম্পর্কে জানে। আমরা চেষ্টা করবো ভালো ক্রিকেটটা খেলার।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার সামনে পাকিস্তান। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে বাংলাদেশ টানা ভালো পারফর্ম করতে পারে না। এবার কি সেই ব্যর্থতা কাটাতে পারবে বাংলাদেশ? লিটনের উত্তর, ‘চেষ্টার তো কখনও কমতি থাকবে না। শুধু দুইটা কেন, যদি ব্যাক টু ব্যাক অনেকগুলো সিরিজও হয় আমাদের একই মানসিকতা, একই লক্ষ্য থাকবে সিরিজ জেতার। কিন্তু পার্টিকুলারলি ম্যাচে আমি বললাম যে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। শ্রীলঙ্কায় দুইদিন আগে যেটা ঘটে গেছে ওটা অতীত। তাই এখন এটা নতুন জায়গা, নতুন ভেন্যু, সবকিছু নতুনভাবে নিতে হবে, নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা প্রস্তুত এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য। দেখি কী হয়...।’
এদিকে শাদাব খানকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামবে পাকিস্তান। তবে সফরকারীদের দলে খুশদিল শাহ এবং ফাহিম আশরাফের মতো অলরাউন্ডার রয়েছে। যারা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ। গত কয়েক মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলা এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচজন ক্রিকেটার পাকিস্তান দলে আছেন। মিরপুরে ১২টি ম্যাচ খেলেছেন খুশদিল। যা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি মোহাম্মদ হারিস, ফাহিম আশরাফ, আবরার আহমেদ এবং আব্বাস আফ্রিদিও ঐ প্রতিযোগিতায় খেলেছিলেন।
বাংলাদেশ দল : লিটস দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি অনিক, শামিম হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, মাহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
পাকিস্তান দল : সালমান আলী আগা (অধিনায়ক), আবরার আহমেদ, আহমেদ দানিয়াল, ফাহিম আশরাফ, ফখর জামান, হাসান নাওয়াজ, হুসেন তালাত, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ আব্বাস আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ নাওয়াজ, সাহিবজাদা ফারহান (উইকেটরক্ষক), সাইম আইয়ুব, সালমান মির্জা এবং সুফিয়ান মুকিম।