কানাডার আলবার্টা প্রদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ৫৫তম মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর এডমন্টনের রাউন্ডল পার্কের এসিটি একুয়েটিক রিক্রিয়েশন সেন্টারে বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার (বেসা) উদ্যোগে দিবস দুটি উদযাপিত হয়।
অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্তিম স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়।
একই সঙ্গে নয় মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জন এবং গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের চার স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের ১১ দফা আন্দোলন ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডার প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যনির্বাহী ও নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ।
তিনি প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ, সকল সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা এবং নির্যাতিত মা-বোনদের আত্মত্যাগের ইতিহাসও তুলে ধরেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার সভাপতি সাইফুর হাসান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার কবির হোসেন, সংবাদপত্রসেবী মো. ইসমাইল, হায়দার জান চৌধুরী, অটোমোটিভ টেকনিশিয়ান তানভীর হাসান, শাকিল আহমেদ, রায়হানা রাসমিন, নারী প্রতিনিধি সোনিয়া আক্তার, সেলিনা ইসলাম, আয়েশা পারভীন, শিউলী বেগম, রিমা বেগম, সাবিরা হাসান, ওশেনিয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেলোয়ার জাহিদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে শহীদদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলেও রাজনৈতিক কারণে তা বিতর্কিত করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, নতুন প্রজন্মের সামনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদ পরিবারগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে এবং এর পেছনে যাদের মদদ রয়েছে তারা দেশে গৃহযুদ্ধের ডাক দিচ্ছে।
তিনি শিশু-কিশোরদের পরিবার ও শিক্ষালয়ে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দায়বদ্ধতা এবং প্রকৃত ইতিহাসচর্চার আগ্রহ সৃষ্টিতে সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টার পক্ষ থেকে নতুন অভিবাসীদের এডমন্টনে স্বাগত জানিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয় এবং মুক্ত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়।
আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী তামিম হোসেইন, মোন্তাসির মামুন, মো. জামাল উদ্দিন, মো. রাইস উদ্দিন, সুলতান রাসেল ও সাইফুর হাসান।
সভায় বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টাকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হন সুলতান রাসেল, সহসভাপতি মো. জামাল উদ্দিন, সেক্রেটারি মো. রহিস উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মুনতাসির মামুন এবং এক্স-অফিসিও হিসেবে থাকেন এস. হাসান।
প্রধান অতিথি নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং সভাপতি সাইফুর হাসান ও সুলতান রাসেলের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজয় দিবসের উপহার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের শেষাংশে পরিবেশিত বাংলাদেশি খাবার উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে।
