নদীবেষ্টিত রংপুর অঞ্চলের ৬ শতাধিক চরের মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে চরের জাহাজ খ্যাত ঘোড়ার গাড়ী। বালুকাময় চরাঞ্চলে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় বছরের পর বছর এই ঘোড়ার গাড়িই এখানকার কৃষকদের ভরসা হয়ে আছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৮১ হাজার ৯৫০ হেক্টর চরভূমি ও শুকিয়ে যাওয়া নদীবক্ষ থেকে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকরা বছরে প্রায় ১,১৯০ কোটি টাকা মূল্যের ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫০ টন ফসল উৎপাদন করছেন। এর ফলে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার হাজার হাজার মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, প্রতিবছর শীতকালে চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন চরের অর্থনীতিকে সজীব রাখছে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।
ডিএই’র রংপুর বুড়িরহাট উদ্যান তত্ত্ব কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম বলেন, গত তিন দশকে চরাঞ্চলে ফসলের চাষ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও অন্যান্য নদীর তীরবর্তী মানুষ এবং প্রান্তিক কৃষকরা ফসলের চাষ করে তাদের ভাগ্য বদল করেছেন।
এ কারণে চরাঞ্চলে কৃষিপণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলের বালুময় রাস্তায় অন্য কোনো যানবাহন সহজে চলতে পারে না, ফলে কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র সমাধান হয়ে উঠেছে। এতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য পরিবহনের একমাত্র বাহন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০০-র বেশি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৭টি চরাঞ্চলে যেমন- আরাজি হরিশ্বর, শনশনাটারি, গণাই, চর বিশ্বনাথ, চর নাজিরদহ, শুভাঘাট, চর সাব্দি, গোপিডাঙ্গা, চর গদাই, চর পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুকশাহাবাজ, চর গণাই, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখাঁ চর, টাপুর চর, সদরা তালুক, চর আজমখাঁ— এসব এলাকার কৃষকদের একমাত্র পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
কাউনিয়ার কৃষকরা জানান, আগে তারা ফসল বাজারে নিয়ে যেতে না পারায় কম দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। কিন্তু এখন ঘোড়ার গাড়ির সহজলভ্যতার কারণে ন্যায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারছেন।
বেকার যুবকদের জন্যও ঘোড়ার গাড়ি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। কাউনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি চালকদের রোজগারের নতুন পথ খুলে গেছে। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, ঘোড়ার গাড়ি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি চরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা ভালোবেসে একে ‘চরের উড়োজাহাজ’ বলে ডাকেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ঘোড়া কেনার জন্য আপদকালীন সহায়তার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
আবা/সজল