অবৈধভাবে বিভিন্ন কোম্পানির স্টিকার ব্যবহার করে ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে উঠেছে ভেজাল জর্দ্দা তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে নামে বেনামে হরেক রকমের জর্দাসহ পান মসলা। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বলে মনে করছেন অনেকে। নেই কোন স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের নজরদারি।
সদর উপজেলার গড়েয়া সড়কের পাশে ভাঙ্গাপুল নামক এলাকায় গড়ে উঠেছে মেসার্স শরিফ কেমিক্যাল ওয়ার্কস।
দেখে বুঝার কোন উপায় নেই, এটি একটি জর্দ্দার কারখানা। নেই কোনো সাইনবোর্ড। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে জর্দ্দা তৈরির কেমিক্যালসহ নানা উপকরণ। আর এসব জর্দার গায়ে লিখা আছে হাকীমপুরি, গোপাল, বাবা, শাহজাদীসহ হরেক রকমের জর্দ্দা। পান মসলায় উপরকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে খড় (ধানের)। আর এসব জর্দ্দা আর পান মসলা হাত বাড়ালেই মিলছে ঠাকুরগাঁও শহরসহ গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে।
ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে সমবায় মার্কেটে পান ও জর্দ্দা ক্রয় করতে আসা হালিমা বেগম বলেন, অর্জিনাল না ভেজাল, তা জানি না। এখন শরীরে কোনো ওষুধ কাজ করে না। তবে তিনি বলেন সিগারেট উঠায় দেওয়া উচিত, জর্দ্দা উঠায় দেওয়া উচিত। না থাকলে খাবো না, আছে বলে আমরা খাচ্ছি।
মো: মিলন বলেন, তামাক পণ্যই ক্ষতিকর, সবাই খাচ্ছে মুখের স্বাদ। তিনি বলেন, মানুষ হাকিমপুরী জর্দ্দার জন্য পাগল। অথচ এই জর্দ্দা বাজারে পাওয়া যায় না। এক কৌটা হাকিমপুরি জর্দ্দার দাম ৪৫০ টাকা। কিন্তু মানুষ খাচ্ছে হাকিমপুরি জর্দ্দা, যা ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যায়।
মনাউন ইসলাম বলেন, এসব পণ্যে সরকারের নজরদারি দেওয়া উচিত। তা না হলে মানুষ অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জর্দ্দা ব্যবসায়ী বলেন, মানুষ কি খাচ্ছে তা তো জানে না। মানুষ না জেনেই খাচ্ছে। পান মসলায় ব্যবহার করা হচ্ছে ধানের খড়। তবে প্রশাসনের দিক থেকে নজরদারি বাড়ানো উচিত। আরেক ব্যবসায়ী বলেন সবাই বিক্রী করছে তাই আমিও বিক্রি করছি। নিয়মনীতি বুঝি না।
ঠাকুরগাঁও জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো: মাহমুদুল কবির বলেন, এটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ, আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না।
ঠাকুরগাঁও স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, আগে অনুমোদন নিবে তার পরে কাজ করবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ দিয়েছে হোটেলে কাজ করার সনদ, কারখানার অনুমোতির নয়।
কারখানা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ঠাকুরগাঁও বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো: হাফিজুর রহমান বলেন, পান মসলা বা জর্দ্দা শিল্পের মধ্যে পরে না। তবে যেটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেটা শর্তসাপেক্ষে।
ঠাকুরগাঁওয়ে তামাকবিরোধী কাজ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এসো জীবন গড়ি’র নির্বাহী পরিচালক মো. নবেল ইসলাম শাহ জানালেন এক ভয়াবহ চিত্রের কথা।
তিনি বলেন, উঠতি বয়সের বাচ্চারা ধীরে ধীরে ধুমপায়ী হতে হতে মাদকাসক্ত হয়ে উঠছে। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলা তামাকবিরোধী টাস্কফোর্স কমিটিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
৬-৭ বছর ধরে জর্দ্দা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন মেসার্স শরিফ কেমিক্যাল ওয়ার্কসের মালিক শরিফুল হক। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান জর্দ্দা উৎপাদন করছে। যার কোনো বৈধতা ছিল না। আমি এসে বৈধ করেছি। আমি সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দেই।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, সরকারের নিয়ম উপেক্ষা করে যদি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে, তাহলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।