রংপুরে এক রাতেই বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের বুলডোজার এনে প্রথমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। পরে সেটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। চত্বরটিকে মুক্তমঞ্চ নামে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, খুনি হাসিনার হাতে হাজারো ছাত্র সমাজের রক্তের দাগ লেগে আছে। খুনি হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অস্তিত্ব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর থাকবে না।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে দিয়ে ‘বিজয় ২৪’ হল নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ফলকও ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে তারা ভেঙে ফেলা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র দাহ করে উল্লাস প্রকাশ করে।
এদিকে রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর কলেজ রোড লালবাগ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জড়ো হয়ে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা মূল ফটকের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর করে এবং স্লোগান দিতে থাকে। তাদের সঙ্গে ম্যুরাল ভাঙচুরে অংশ নেন সাধারণ ছাত্র-জনতা।
অপরদিকে দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে ক্ষতবিক্ষত করে শহীদ আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার সাঁটানো হয়। স্থানটির নামকরণ করা হয় স্বাধীনতা চত্বর।
এদিকে ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিব ম্যুরালের কবর রচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুলডোজার দিয়ে ফ্যাসিবাদী মুজিব চিহ্ন মুছে দেয়া হয়েছে।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্র-জনতা রংপুর মহানগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন বিলীনসহ গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, শেখ হাসিনা লাইভে এসে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদে আমাদের বুলডোজার কর্মসূচি। আমার ভাইদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনি হাসিনা প্রকাশ্যে আসার সাহস দেখায় কী করে? ফ্যাসিবাদকে এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব এবং দফতর ও প্রচার সেলের সম্পাদক রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ে ডিসির মোড়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল গুড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুলডোজার দিয়ে ফ্যাসিবাদী মুজিব চিহ্ন মুছে দেয়া হয়েছে। এই বাংলায় ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি শাখার সদস্য সচিব রহমত আলী বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা দেশব্যাপী যে ফ্যাসিবাদী চিহ্ন রেখে গেছেন, আমরা তা নিশ্চিহ্ন করতে আজ একত্রিত হয়েছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।