২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের গুরুদায়িত্ব ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। কিন্তু পুরাতন ভবনটি সংস্কারের অভাবে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভবনের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে আহত হচ্ছে রোগীরা। এমতাবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা, দুর্ঘটনা ও ভর্তিকৃত রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালের পুরাতন ভবন অকেজো ঘোষণা করে নতুন ১০০ শয্যার অবকাটামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পাঠানো আবেদন থেকে জানা যায়, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং এ আগত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। এ অবস্থায় উক্ত হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ আগত সর্ব সাধারণ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। ভৌগোলিক কারণে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করিমগঞ্জ, ইটনা, পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল এবং নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া, মদন উপজেলা থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ এলাকার লোকজনের আয়ের উৎস কৃষি হওয়ায় তারা উন্নত সেবা নিতে উপজেলার বাহিরে যাবার সুযোগ কম। আবাসিক ভবনসহ পুরাতন হাসপাতালের চাঁদের রডে মরিচা পড়া জং ও ছাদের প্লাস্টার ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কিছুদিন আগে অন্তঃ এবং জরুরি বিভাগে ছাদের নিচের অংশের প্লাভ এবং বৈদ্যুতিক পাকা ভেঙ্গে কর্মচারী আহত হয়। পুরাতন হাসপাতালের বৈদ্যুতিক লাইন সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় লাইন বিকল হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু তাই নয় এখনও হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখায় মাঝে মধ্যে শর্ট সার্কিটের শব্দ শোনা যায়।
প্রায় সময় বাল্ব, ফ্যান, কম্পিউটার বিকল হয়ে যায় এবং কিছু দিন আগে ইপিআই শাখার ভ্যাকসিন রাখার ফ্রিজের ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার পুড়ে যায়। ফলে হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজসহ ইপিআই কাজে ব্যবহৃত ভ্যাকসিন সংরক্ষণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে যে কোনো সময় সরকারের ইপিআই কাজের অগ্রগতি ব্যাহতসহ আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ অফিস ভোল্টেজ ওটা নামার কথা স্বীকার করেন। বৈদ্যুতিক লাইন পুরাতন হওয়ায় ভোল্টেজ ওটানামা ছাড়াও প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল ভবনের অবস্থান পার্শ্ববর্তী অন্যান্য স্থান হতে নীচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পুরাতন হাসপাতাল ভবনে পানি প্রবেশ করে। যার ফলে রোগীদের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহা-পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ তিনি আরও লিখেন, অত্র হাসপাতালের বহি:বিভাগে ৪৫০ থেকে ৫৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এছাড়াও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ জন রোগী জরুরি সেবা গ্রহণ করেন। অনুমোদিত ২৮ জন চিকিৎসক (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ) পদের বিপরীতে বর্তমানে ৩ জন চিকিৎসক পূরণকৃত থাকা সত্ত্বেও ২ জন বিভাগীয় মামলার ছকে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হচ্ছে এবং ১ জন সংযুক্তিতে কর্মরত আছেন। সেই হিসাবে বর্তমানে ২৮ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত এর মধ্যে ১ জন বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে আছে ও ২৩ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য আছে। ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ১২ জন অন্যান্য চিকিৎসকসহ মোট ২৩ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় সার্বিক চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, হাসপাতালের ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। স্টাফরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা বাধ্য হয়েই এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই দিচ্ছি স্বাস্থ্যসেবা। ভবন সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠিয়েছি।