পাবনার ঈশ্বরদীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকের ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এখনো কমেনি। নতুন করে আরো শতাধিক শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
রোববার (১ জুন) রাত বারোটা থেকে আজ বিকাল ৪টা পর্যন্ত নতুন করে ১১৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নতুন করে ৮৬ জন এবং লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩২ জন ভর্তি হয়েছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা সবাই ঈশ্বরদী ইপিজেডের রেনেসাঁ, ডেনিম, ভিনটেজ (এবা) নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডি, স্টেলা হেয়ার-সহ অন্যান্য কয়েকটি কোম্পানির শ্রমিক। ইতোমধ্যেই ছয় শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদী ইপিজেডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অসুস্থরা ঈশ্বরদী ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অসুস্থ হওয়া শ্রমিকরা অধিকাংশই লালপুরে বসবাস করেন। তবে হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের। গুরুতর অসুস্থতাদের কয়েকজনকে পাবনা সদর হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শ্রমিকরা বলছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খাওয়ার পরে ইপিজেডে সরবরাহ করা পানি পান করে তাদের ভয়াবহ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছেন, শ্রমিকরা তাদের জন্য রাখা বিশুদ্ধ পানি পান করেন না।
শ্রমিকরা জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেডে দুপুরে খাওয়ার পর থেকে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, জ্বর, বমি ও মাথাব্যথায় একে একে অসুস্থ হতে শুরু করেন তারা। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু শ্রমিক ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেলেও পরে মধ্যরাত থেকে শুক্রবার (৩০ মে) এবং শনিবার (৩১ মে) বিকেল পর্যন্ত শত শত শ্রমিক ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে ঈশ্বরদী হাসপাতাল ও ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার এবং পার্শ্ববর্তী লালপুর হাসপাতালে যান। অনেকে আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান।
সরেজমিনে রোববার (১ জুন) বিকেলে ঈশ্বরদী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। বেড সংকুলান না হওয়ায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দা, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে আছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল থেকে রবিবার ( ১ জুন) বিকাল ৪ টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ৩২৯ জন ইপিজেডের ডায়রিয়া আক্রান্ত শ্রমিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৯৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেডের শ্রমিক ভর্তি হয়। এর বাইরেও অনেকে আবার হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে আউটডোরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান।
ঈশ্বরদী ইপিজেড এর চিকিৎসক ফয়সাল হাসান বলেন, এটা ডায়রিয়ার মৌসুম। বছরে দুইবার ডায়রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশি খারাপ অবস্থা হলে তাদেরকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পাবনা সদর হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ২৩১ জন এবং ৩১ মে বিকাল পর্যন্ত ৩৫৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৯ মে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রোববার পহেলা জুন বিকেল চারটা পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ইপিজেডের নতুন শ্রমিক ভর্তি হয়েছেন ২৩৪ জন। অন্যদিকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইপিজেডের শ্রমিক ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন।
রেনেসাঁ কোম্পানির শ্রমিক বিটন আলী জানান, শুধু তাদের কোম্পানিরই প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।
রোববার বিকেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বারান্দায় শুয়ে স্যালাইন লাগিয়ে আছেন স্টেলা হিয়ার কোম্পানির শ্রমিক ও সাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা শারমিন। তিনি জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি গত দুইদিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. শাহেদুল ইসলাম শিশির বলেন, পানিতে পয়জনিক জনিত কারণে ডায়রিয়া হয়েছে।
লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীম বলেন, পানি সংক্রমণের কারণেই শ্রমিকদের এভাবে ডায়রিয়া হয়েছে। ইপিজেডের ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা এখনো আসছেন চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। স্যালাইনের সংকট দেখা দিলে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা সেনাবাহিনী, ফায়ার ব্রিগেডসহ বিভিন্ন উৎস থেকে স্যালাইন সংগ্রহ করায় বর্তমানে স্যালাইনের সংকট নাই।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, ইপিজেডে খাবারের যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা এত সংখ্যক রোগী বেড না থাকায় বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত বিব্রতকর। তিনি বলেন ঈশ্বরদী ইপিজেডে প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক কাজ করে। তাদের সঙ্গে আমরাও সাপ্লাইয়ের পানি পান করি। তারপরও পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত শ্রমিকদের সব টেস্ট ও ট্রিটমেন্ট ইপিজেড মেডিকেল সেন্টার থেকে করা হবে। আক্রান্তরা যথানিয়মে মেডিকেল লিভ পাবে।