ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা: ১৫ দিনে ১৭ মৃত্যু

ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা: ১৫ দিনে ১৭ মৃত্যু

পানিবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বরগুনায় এডিস মশার উপদ্রব বেড়েছে। হুহু করে বেড়ে গেছে মশার বংশবিস্তার। সারাদেশের এক চতুর্থাংশ ডেঙ্গু রোগী থাকায় বরগুনা এখন ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এডিস মশা নিধনে সর্বসাধারণের অসচেতনতা ও প্রশাসনিক উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা ।

বরগুনার বিভিন্ন জনপদে লবণাক্ত পানির কারণে অনেক বাসিন্দা বসতবাড়িতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখেন। জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। পানিবদ্ধতা ও যত্রতত্র ঝোপঝাড়ের কারণে মশার ব্যাপক বিস্তার ঘটে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। যার ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ৮৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। মে মাসে এ সংখ্যা ছিল ৭৮৪ জন। এপ্রিল মাসে ১৮০ জন। গত দুই মাসে মোট ভর্তি ছিল ৯৯৪ জন। অথচ জুনের অর্ধেকে এসে সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলার মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৩ জনে। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ২১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন, ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০৮ জন, আর মোট সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ৬৮৯ জন। এ ছাড়া চলতি মাসে এখন পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। যার মধ্যে গত রবিবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত একজন সিনিয়র নার্সের ৩ বছরের একটি শিশুর মৃত্যু বরগুনাবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৯৯৪ জনের। তবে গত দুই সপ্তাহে ৯ জন মারা গেছে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। এর বাইরেও ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বরগুনার আরও অন্তত ৯ জন।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগী জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'আমাদের অসচেতনতার কারণেই এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার মত একটা ক্ষুদ্র প্রাণীর কাছে আমরা অনেকটাই অনিরাপদ। অতি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর কারণে শুধু মৃত্যুর খবরই শুনতে হবে।'

জানা গেছে, সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছিল কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জলাশয় ও জলাবদ্ধ স্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

কি কারণে বরগুনায় ডেঙ্গু প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে তার বিস্তারিত গবেষণা করতে সোমবার আইইডিসিআর থেকে ছয় সদস্যের একটি গবেষণা দল বরগুনায় যায়। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১৯২ জন ডেঙ্গু রোগী। রোগীরা মেঝেতে, লিফটের সামনে, করিডোরে এমনকি সিঁড়ির গোড়াতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিটি রোগীর সঙ্গে থাকে ৩-৪ জন স্বজন। ফলে হাসপাতালে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাবিবুর রহমান বলেন, 'ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। তবে অধিকতর অসুস্থ অনেক রোগী বরিশাল পাঠানো হচ্ছে কিন্তু টাকার অভাবে যেতে না পারার ফলে এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি।'

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজোয়ানুল আলম বলেন, 'অতিরিক্ত ১০ জন ডাক্তার ও ১০ জন নার্সের বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত ৩ জন ডাক্তার যোগ দিয়েছেন। আশা করছি বাকিরা ও স্বল্প সময়ের মধ্যে যোগদান করবেন।

ডেঙ্গু,মৃত্যু
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত