যমুনা সেতু থেকে পরিত্যক্ত রেলপথ অপসারণের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার পর ইতিমধ্যেই যমুনা সেতুর পূর্ব পাড় থেকে রেললাইন অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। যমুনা রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রায় ৩ মাস আগে যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার পর যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই পরিত্যক্ত রেলপথ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। এজন্য সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সেতু কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ওই রেলপথের অপসারণ চেয়ে সেতু বিভাগে পৃথক দুটি চিঠি দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ মে যমুনা সেতুর পরিত্যক্ত রেলপথ অপসারণ করে সড়ক বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
যমুনা সেতু সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, যমুনা সেতুর পরিত্যক্ত রেলপথের প্রস্থ্য যেহেতু সাড়ে ৩ মিটার। পরিত্যক্ত ওই রেলপথ অপসারণেরপর মূল সেতুর সাথে সংযোগ করা হলে সেতুর প্রশস্থতা আরও সাড়ে ৩ মিটার বাড়বে। এতে উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার জায়গা বাড়বে। এ ধরনের সেতুর আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড হলো ৭ দশমিক ৩ মিটার। কিন্তু বর্তমানে এ সেতুর প্রতি লেনের প্রশস্থতা রয়েছে ৬ দশমিক ৩ মিটার করে। এ কারনে গাড়ির চাপ বাড়লে সেতুর ওপর দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। রেললাইন অপসারণের পর প্রতি লেনের প্রস্থ হবে ৮ মিটার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য এটি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধন করা হয়। এ সেতুতে রেলপথ না থাকায় জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই সেতুর ওপর উত্তরপাশে তৈরি করা হয় রেলসেতু এবং নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয় লোহার অ্যাঙ্গেল।
সেতু উদ্বোধনের প্রায় ৫ বছর ২ মাস পর ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চলাচল শুরু হয় এবং ট্রেন চলার কারণে ২০০৬ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেন চলাচলের গতিসীমা কমানো হয়। এ কারণে সেতুর দুই প্রান্তের ট্রেনগুলোর জট বেঁধে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতো। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা সেতুর উত্তর পাশ্বে আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় দেশের দীর্ঘতম এ রেলসেতু। প্রথমবারের মতো চলতি বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি যাত্রী নিয়ে এ রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু করা হলে যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বৃহত্তম এই রেলসেতু ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এবং পরিত্যক্ত রেলপথ অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।