পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর নির্মাণাধীন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ইতিপূর্বে ৮ মে চাকরিচ্যুতের আদেশ প্রাপ্ত ১৮ জন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তার অপসারণের আদেশ কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের কেন চাকরির পূর্ণ ধারাবাহিকতাসহ স্বপদে পুনর্বহাল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৯ জুন) রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি আকরাম হোসাইন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীরা তাদের অপসারণ আদেশ প্রত্যাহারের জন্য বোর্ড অব ডিরেক্টরস, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান বরাবর যে আবেদন করেছেন তা দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস. এম. মাহিদুল ইসলাম সজিব।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের সার্ভিস আর প্রয়োজন নেই বিধায় 'নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এমপ্লোয়িস' চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি অব্যাহতি আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে বোর্ড অব ডিরেক্টরস, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান বরাবর গত ১২ মে আবেদন করেন তারা।
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, স্থায়ী পদের বিপরীতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর ন্যূনতম ১০ (দশ) বছর চাকরি করার বাধ্যবাধকতার অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর প্রদানপূর্বক তারা চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তোষজনক দুই বছরের চাকরি এবং রাশিয়ার রোসাটম টেকনিক্যাল অ্যাকাডেমি থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রায় কোটি টাকা খরচ করে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট সম্পর্কিত তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক এবং কর্মস্থলে প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়। পরে তাদের পদোন্নতিও দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। গত ১০ মে রাতে ই-মেইলে ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যেককেসহ ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান সই করা এক দাপ্তরিক আদেশে এই অব্যাহতির কথা জানানো হয়। একইসঙ্গে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ তাদের রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিন সিটি বহুতল আবাসিক এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট হাসমত আলী (প্রধান কার্যালয়), ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, আবু রায়হান, রফিকুল হাসান, আয়নাল হোসেন, নাঈম আল সাকিব, আবু সাঈদ, এ কে এম আব্দুল আল আমিন, শাহ ইখতিয়ার আলম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল আল নোমান, আসিফ খান, মুহাম্মদ ইমামুল আরেফিন, ইকরাম, রুহুল আমিন, উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন, রুবেল হোসেন এবং টেকনিশিয়ান ফিরোজ আহমেদ।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন বলেন, এমডি ড. জাহেদুল হাসানকে অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করায় আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিতে ঈশ্বরদীর রূপপুরে কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ গত ২৮ এপ্রিল আন্দোলন শুরু করেন। ৬ মে তারা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে কোম্পানির অফিসে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন তারা। এ ঘটনায় এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি ও কোম্পানির আইন মেনে চলার চিঠি দেয়।