ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাঙ্গুনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে মানববন্ধন

রাঙ্গুনিয়ায় হাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে মানববন্ধন

সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় থেকে লোকালয়ে চলে আসা বন্য হাতির উপদ্রব বেড়েছে। হাতির তাণ্ডবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর ধান, মারা গেছে একাধিক গরু। প্রতিবছর এই তাণ্ডব চলে আসলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হাতির উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসন ও বনবিভাগের হস্তক্ষেপ কামনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নারিশ্চা বটতল এলাকায় নারিশ্চা, হরিহর, রাজাপাড়া গ্রামের কয়েক শতাধিক কৃষক এই কর্মসূচি করেন।

কালিন্দিরানী সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন শেষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কৃষক সৈয়দ মোহাম্মদ লোকমান হাকিম। বক্তব্য দেন কৃষক খোরশেদ আলম, আবদুল মান্নান, খাইজ আহমদ, নুরুল আবছার, শাহজাহান সিকদার, মো. রুবেল, মো. ফরিদ, মো. আলম, রিজিয়া আক্তার, ঝিনু আক্তার, বাচা মিয়া প্রমুখ।

তারা জানান, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা, শিলক, কোদালা ও পদুয়া ইউনিয়নে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিয়মিত তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্য হাতির পাল। বিশেষ করে পদুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে এবার কষ্টের ধান লাগানো থেকে পাকা হওয়া পর্যন্ত ৪-৫ বার হাতির পাল হানা দিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় মানুষের বাড়িঘরেও তাণ্ডব চালিয়ে মানুষের গরু-ছাগল মেরে ফেলছে৷ প্রতিবছর হাতির আক্রমণে মারা যাচ্ছে একাধিক মানুষ, অঙ্গহানি হয়েছেন অনেকে৷ বর্তমানে চলমান আমন মৌসুমে ধান পাহারা দিতে গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক৷ হাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে বনবিভাগের দায়িত্বশীলদের জানালেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। এমনকি হাতির তাণ্ডব থেকে কৃষকের কষ্টের ফসল ও লোকালয়ের বাসিন্দাদের রক্ষায় বনবিভাগের নিয়োগকৃত দলও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না বলে জানান তারা। এতে ইতোমধ্যেই চলতি মৌসুমে শত শত হেক্টর ধান হাতির তাণ্ডবে নষ্ট হয়েছে এবং স্থানীয়দের বেশকিছু গৃহপালিত গরু-ছাগল মেরে ফেলেছে। ক্ষতিপূরণ পেতে জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হওয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক তাও করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

মানববন্ধন শেষে স্থানীয় নারিশ্চা বিট অফিসে মিছিল সহকারে গেলে বিট কর্মকর্তা অসুস্থ বলে জানান এক ফরেস্ট গার্ড। এসময় ক্ষুব্ধ জনসাধারণ তারা হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষায় কোন দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ করেন এবং সড়কে অবৈধ বাঁশ-কাঠের গাড়ি থেকে মাসোহারা আদায়েই বেশি সময় ব্যয় করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

জানতে চাইলে মানিক নামের নারিশ্চা বিটের ওই ফরেস্ট গার্ড জানান, হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষায় খবর পেলেই তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করছেন বলে জানান তিনি।

এসময় মো. খোরশেদ আলম নামে প্রবীণ এক কৃষক জানান, তারা ক্ষতিপূরণ নয়, যেন হাতির পাল একেবারে লোকালয়ে না আসে, সেই ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করা হয়।

মো. আজগর নামে এক কৃষক জানান, তার হাতির তাণ্ডবে চার পাঁচশত কানি ধানের আবাদ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিপূরণ চাইতে আবেদন করতে গেলেও চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হওয়ায় তা তারা অনুসরণ করতে পারছেন না বলে জানান।

ঝিনু আক্তার নামে এক কৃষানি জানান, তার ঘরে তাণ্ডব চালিয়ে গোয়ালের গরু মেরে ফেলেছে হাতি। কিভাবে আবেদন করতে হয় তাও জানেন না তিনি। তাই এখন পর্যন্ত আবেদন করতে পারেননি।

শাহজাহান সিকদার জানান, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির পালের লোকালয়ে হানা দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। গেল কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি রাতেই দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে হাতি আসায় নির্ঘুম রাত কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাতির আক্রমণে গেল পাঁচ বছরে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন, নষ্ট হয়েছে ফসল। তাণ্ডবে অনাবাদি থেকে গেছে শত শত হেক্টর কৃষি জমি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অনেকে আবার ধানি জমির চারপাশে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখছেন। এটি করতে গিয়েও অনেকে মামলার কবলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, পটিয়া হয়ে বোয়ালখালী, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, রাইখালী কাপ্তাই হয়ে শিলছড়ি পর্যন্ত হাতির একটা করিডোর আছে। এই পথে হাতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে। তবে আগের তুলনায় হাতির সংখ্যাও এখন বেড়েছে। অন্তত ৪০টি হাতি এখন এই পথে চলাচল করে।

এই ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান বলেন, "হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে বিভিন্ন সভা–সেমিনার, মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে হাতির আক্রমণে ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং মারা যাওয়া পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে হাতি আসলে আতঙ্কিত না হয়ে তাকে ফিরে যেতে কৌশলে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আমাদের জানাতে হবে। হাতির তাণ্ডবের ক্ষতিপূরণ এবং রেসপন্স টিমকে অ্যাকটিভ করতে কাজ করা হচ্ছে।"

হাতি,তাণ্ডব,মানববন্ধন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত