ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলে খড়ের দামে খুশি কৃষক, বিপাকে খামারিরা

রংপুর অঞ্চলে খড়ের দামে খুশি কৃষক, বিপাকে খামারিরা

রংপুর অঞ্চলে গরুর প্রধান খাদ্য খড়ের দাম কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এতে খামারি ও সাধারণ পশু পালনকারীরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। একদিকে খড়ের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি অন্যান্য পশুখাদ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এর ফলে গরু পালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন খরচ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা খামারিদের জন্য বড় ধরনের লোকসানের কারণ হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ খড় বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও চরম সংকটে পড়েছেন খামারিরা।

খামারিদের দাবি, এর আগে খড়ের বাজার কখনো এতটা লাগামহীন হয়নি। আগে যেখানে এক মণ খড়ের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে। শুধু খড় নয়, দানাদার খাদ্যও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে অনেকে কৃষি জমির মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে খড় সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, গুড়া-ভুসির পাশাপাশি ধানের খড় গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। গুড়া-ভুসির সঙ্গে খড় কেটে ভিজিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়, যা গরুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তাই খামার বা ব্যক্তিগত গরু পালনকারীদের সারাবছরের জন্য খড়ের প্রয়োজন থাকে।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে ধান মাড়াইয়ের জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না, ফলে খড় সহজলভ্য ছিল। এখন মেশিনে ধান মাড়াইয়ের ফলে অধিকাংশ খড় নষ্ট হয়ে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারই খড়ের সংকটের অন্যতম কারণ।

খামারি ইউসুফ মিয়া জানান, তার খামারে প্রতিটি গরুর জন্য দিনে প্রায় ৩০০ টাকার খড় ও অন্যান্য খাবার লাগছে।

তিনি বলেন, “গত বছর এক হাজার খড়ের বিচালির দাম ছিল মাত্র ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা, এখন একই পরিমাণ খড় কিনতে হচ্ছে ৪,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকায়।” এই লোকসানের কারণে অনেকেই গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আরেক খামারি মনির হোসেন জানান, বর্ষায় তার ৮ বিঘা জমির খড় নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাইরে থেকে চড়া দামে খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, “এক হাজার খড়ের আঁটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকায়। একটি গাভীর পেছনে দিনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৫০ টাকার মতো।”

স্থানীয় খামারি ও পশু পালনকারীরা সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন—খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা, সরকারিভাবে দাম নির্ধারণ ও মনিটরিং করা, সহজলভ্য গো-খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভুসি-খৈলসহ দানাদার খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা। তাদের আশঙ্কা, সংকট সমাধান না হলে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।

জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে খড়ের দাম বেড়েছে। এতে কৃষকেরা লাভবান হলেও খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তাই খামারিদের শুধু খড়ের ওপর নির্ভর না করে উন্নতমানের ঘাস চাষ করার পরামর্শ দেন তিনি। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ১০০ একর জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়েছে, যা জেলার ৫৭টি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী রয়েছে। তাই খামারিদের উচিত ভুট্টা ও নেপিয়ার ঘাসের চাষ বাড়ানো। এতে খরচ কমবে এবং গরু স্বাস্থ্যবান থাকবে।

রংপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আবু সাইদ আকন্দ জানান, টানা বৃষ্টির কারণে চাষাবাদে ক্ষতি হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় ফসল তলিয়ে কৃষক ও খামারি উভয়ই বিপাকে পড়েছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও খামারিরা ঘাস উৎপাদনে মনোযোগ দেবেন।

বিপাকে খামারিরা,দামে খুশি কৃষক,রংপুর অঞ্চল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত