পাবনার হেমায়েতপুরে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার বেহাল সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে চরাঞ্চলের ১০ গ্রামের মানুষ। চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপন্য সময় মত বাজারে বিক্রি করতে না পারায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষক। আটকে আছে চরাঞ্চলের ১০ গ্রামের অর্থনীতির চাকা।
জানা গেছে, পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভগীরথপুর থেকে ভুইড়ির ছাম মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। কিন্তু সড়কটির বেহাল দশা। শানিকদিয়ার মন্ডল মোড় কাঁচাবাজারে চরাঞ্চলের আশপাশের অন্তত ১০ গ্রাম থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে আনে। কিন্তু সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকদের।
এছাড়া সড়কের দুর্দশার কারণে রোগী নিয়ে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না যেতে পারায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এলাকার বিদ্যালয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমছে শিক্ষার্থী। এলাকাবাসি সড়কটি দ্রুতই পাকাকরণের দাবি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর, ভগীরথপুর, রতনপুর, জয়েনপুর, বোয়ালগাড়ী ও ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটিসহ অন্তত ১০ গ্রামের চরে কৃষকের শ্রমে ঘামে ফলেছে সবুজ সতেজ সবজি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কলাবাগান ও সবজি। সম্প্রতি এসব অঞ্চলের পদ্মার চরে এমন সবুজ বিপ্লবে বদলে গেছে area's কৃষি অর্থনীতি। এক সময়ের পতিত জমিগুলোতেই এখন সবুজ হাসি।
মরিচ, কলা, কুমড়া, লাউ, ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, মিষ্টিকুমড়া ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ এখানে। এসব সবজি মন্ডল মোড় বাজারে নিতে হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভগীরথপুর থেকে ভুইড়ির ছাম মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাড়ি দিতে হয়।
কৃষকরা বলছেন, এই বাজার থেকে ট্রাক ভরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকে কাঁচামাল কেনায় কৃষকদের ভালো দাম পাওয়ার কথা থাকলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেহাল সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতেই কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত কাদাপানি।
ফলে মাঠ থেকে তোলা ফসল ভ্যান বা মহিষের গাড়িতে আনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এবড়ো-থেবড়ো পথে গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া। শ্রমিক ও পরিবহন সংকটে অনেক সময় ক্ষেতেই নষ্ট হয় কষ্টের ফসল।
ভগীরথপুরের জফির মাঝি বলেন, ‘শুধু পদ্মার চর থেকেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার সবজি বাজারে যায়। নদীটুকু নৌকায় এলেও এখান থেকে বাজারে নেওয়ার উপায় নেই। মাথায় করে দফায় দফায় বাজারে নিতে হয়। ওই রাস্তাটুকু যদি পাকা করে দিতো, তাহলে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি উপকার হতো।’
ভবানীপুরের কৃষক শহিদুল বলেন, ‘রাস্তা খারাপ হওয়ায় মাথায় করে সবজি বাজারে আনতে দেরি হয়ে গেছে। এজন্য এখন ব্যবসায়ীরা তেমন মাল টানছে না। এখন নেবে কম দামে। পদ্মার ওই চর ও এই চর মিলিয়ে হাজার হাজার বিঘা জমিতে খালি সবজি আর সবজি। এগুলোর যদি সঠিক মূল্য পাওয়া যেতো তাহলে কৃষকদের ভাগ্যই বদলে যেত। রাস্তার জন্য সেটি আর হচ্ছে না। আবাদ করে শান্তি নাই, সবজি বাজারে আনতে শান্তি নাই।’
ভগীরথপুরের কৃষক হাসান বলেন, ‘গাড়িতে করে মাল (সবজি) কি আনবো ভাই, হেঁটে চলার মতো উপায়ই তো নাই। এবড়ো-থেবড়ো যাই থাক, শুকনা সময়ে তবুও ৫০ টাকার জায়গায় ১০০ টাকা দিলে এক ঝাঁকি সবজি নিতে ভ্যান পাওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টি হলে ৫০০ টাকাতেও সেটা পাওয়া সম্ভব না।’
এ ব্যাপারে পাবনা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আফনান আজম রুদ্র বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোতে ব্যাপক পরিমাণ সবজিসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। পাকা সড়ক না থাকায় উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আগামী প্রকল্প পরিকল্পনা সড়কটি রয়েছে। অনুমোদন পেলে সড়ক নির্মাণ করা হবে।’
