
ভারতের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত পানি বন্ধ করবে, সীমান্তে মানুষ মারবে, চাল-পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিবে। আমরা আর এই দাদাগিরি দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই ভারত আমাদের সঙ্গে সম-মর্যাদা দিয়ে সমান অধিকার দিয়েছে। অন্যথায় ভারত কখনও বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে পাবে না।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে ‘পদ্মা বাঁচাও’ গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পদ্মা নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে চুপিসারে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত। তারপর বাংলাদেশ ভাগ হলে তখন সেটাকে চালু করা হয়। আর সেটি চালু করার অনুমতি দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর পদ্মা নদীতে পানি কমে যায়, বেড়ে যায় মানুষের দুর্ভোগ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করে লংমাচ করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রথমবারের স্বাধীনতা ঘোষক জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে পদ্মা-ফারাক্কা নিয়ে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। এরপর আর কেউ এই সংকট মোকাবিলায় চেষ্টা করেনি, একমাত্র খালেদা জিয়া ছাড়া। তিনি পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলেছিলেন।
মির্জা ফখরুল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে যে সরকার আসবে সেই সরকার যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে আমরা এই পদ্মার পানিতে আরও ডুববো।
গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, পদ্মা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর বিকল্প হিসেবে গঙ্গা ব্যারেজ তৈরি করতে চাই। সেখানে আমরা পদ্মার পানি আটকে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ওই পানি আমাদের নদীগুলোতে ছেড়ে দিতে পারবো। আর বন্যার সময়ে পানি আটকে রাখতে পারবো। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় দুর্ভোগ কমে যাবে।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এই দেশের মানুষ ধর্মপ্রিয়। ধর্মকে ভালোবাসে, আল্লাহর নবীকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা ধর্মান্ধ নয়, সাম্প্রদায়িক নয়। গত নির্বাচনের হিসাব করে দেখেন, কত পার্সেন্ট ভোট পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। পাঁচ-ছয় পার্সেন্ট। রাতারাতি লাফ দিয়ে ৫১ পার্সেন্ট হয়ে যাবেন—এটা মনে করবেন না। বাংলাদেশের মানুষ সহজে আপনাদের ভোট দেবে না, কারণ আপনাদেরকে তারা বিশ্বাস করে না।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, আপনারা সেই যুদ্ধের শুধু বিরোধিতাই করেননি, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যাও করেছেন। এ কথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা হয় না, কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। আজকে উল্টাপাল্টা, আবোল-তাবোল, সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলে আমাদের মাথা নামাতে পারবেন না।
‘চলো জি ভাই, হারঘে পদ্মা বাঁচাই’—স্লোগানে বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ আয়োজিত এই সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক শাজাহান মিঞা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা।