অনলাইন সংস্করণ
১১:৩৫, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
মজলুম জননেতা, আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে দাফন করা হয়।
মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজারে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সাত দিনব্যাপী ভাসানীর মেলা ইতোমধ্যে জমে উঠেছে।
সোমবার ভোর থেকেই মজলুম জননেতার মাজারে মানুষের ঢল নামবে। বিএনপিসহ নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। কয়েক দিন আগেই তার ভক্ত-অনুসারী ও মুরিদানবৃন্দ সন্তোষে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে তার জন্ম। যদিও জন্ম সিরাজগঞ্জে, জীবনের সিংহভাগ কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। লাইন-প্রথা উচ্ছেদ ও জমিদারদের নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে সারাজীবন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন ঘটায়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন এবং স্বাধীনতার পরে তার সর্বশেষ বড় ভূমিকা ছিল ফারাক্কা লং মার্চ।
মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্নেহ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুও তাকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। ১৯১১ সালে মওলানা মোহাম্মদ আলীর সান্নিধ্যে এসে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯১৭-১৮ সালে তুরস্কের সহায়তায় ভারতবর্ষ স্বাধীন করার পরিকল্পনায় রেশমী রুমাল আন্দোলনে অংশ নেন এবং ১৯১৯ সালে কারাবরণ করেন। তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সাহচর্য লাভ করেন, স্বরাজ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
১৯২৫ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত আসাম ও পূর্ব বাংলায় কৃষক-মজুরদের স্বার্থ রক্ষায় সংগঠন গড়ে জমিদার ও সুদখোর মহাজনবিরোধী আন্দোলন করেন। ১৯২৮ সালের খিলাফত সম্মেলন এবং ১৯২৯ সালের ভাসান চর কৃষক-প্রজা সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হন। ১৯৩৭ সালে লাইন-প্রথাবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পল্টন ময়দানে জনসভা করেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে বিখ্যাত ‘আসসালামু আলাইকুম’ ঘোষণা দেন। একই বছরে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬৫ সালে আইয়ুববিরোধী নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে কাজ করেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাপের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি উত্থাপন, ১৯৬৮ সালে ১০ দফা দাবি সপ্তাহ পালন এবং ১৯৬৯ সালে আইয়ুব আহূত গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে বিভিন্ন কৃষক সম্মেলন, ৪ ডিসেম্বর পল্টনে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণার আহ্বান জানান।
স্বাধীনতার পরে তিনি দেশব্যাপী আন্দোলন পরিচালনা করেন—১৯৭৪ সালের ভুখা মিছিল আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দেয়। ১৯৭৬ সালে তার নেতৃত্বে ফারাক্কা লং মার্চ হয়। একই বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকালে সাড়ে ৭টায় ভাইস চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারত করবেন। এরপর বিভিন্ন হল ও ক্যাম্পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মাজারে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দলও দিনের বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করবে।
