সম্প্রতি ইরানে মার্কিন সামরিক হামলা বিশ্বব্যাপী কড়া সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল কাইয়ুম এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেন, এর ফলে চীন ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর কূটনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বর্তমানে একতরফা নীতিতে চলছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অনীহা দেখাচ্ছে। এতে করে তারা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে ভারতকেও একই দলে টেনে আনছেন অনেকে, যাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
জেনারেল কাইয়ুম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি সংঘাত বাড়ে, তা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর জড়িত থাকার ঝুঁকি এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি। কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের মতো অঞ্চলগুলোতে বিরোধ আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
ইসরায়েলের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থেই ইরানের ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে। ইসরায়েল একা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার নিরপেক্ষতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
চীন ও রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জেনারেল কাইয়ুম বলেন, পশ্চিমা আধিপত্যের বদলে এখন বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও), ব্রিকস, ও ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবোর) উদ্যোগের মাধ্যমে এই দুই রাষ্ট্র একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। এরাই এখন একতরফা আগ্রাসন মোকাবিলার প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
পাকিস্তান এই সংঘাত থেকে দূরে থাকার নীতিতে অটল থাকলেও, সেখানে প্রক্সি যুদ্ধের আশঙ্কা অস্বীকার করেননি তিনি। বরং বলেন, ভারত ও ইসরায়েল মিলে এই অঞ্চলে পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম দেশগুলোকে রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়েও জেনারেল কাইয়ুম সতর্ক করে বলেন, হরমুজ প্রণালী ঘিরে সংঘাত বাড়লে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও রেহাই পাবে না। বিশেষ করে জ্বালানি আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সবশেষে, ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শান্তি পুরস্কার পাওয়ার জন্য আংশিক সাফল্য নয়, বরং টেকসই ও সার্বিক শান্তি স্থাপন করতে হবে। ইউক্রেন, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন ও তাইওয়ান সংকটে ইতিবাচক ভূমিকা না রাখলে ট্রাম্পের জন্য এই পুরস্কার দুরূহ হবে।