জিলহজ মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে ও নারীদের জন্য নি¤œস্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ : ২৮)। বিখ্যাত সাহাবি মুফাসসির ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা আইয়ামে তাশরিক উদ্দেশ্য এবং জিকির দ্বারা তাকবিরে তাশরিক উদ্দেশ্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবীজি (সা.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (বোখারি : ৯৬৯)
আইয়ামে তাশরিকের প্রেক্ষাপট
ইবরাহিম (আ.) ছেলে ইসমাইলের পরিবর্তে যে ভেড়া জবাই করেন, পবিত্র কোরআন একে (বেজিবহিন আজিম) বিরাট কোরবানির পশু হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মুফাসসিরগণ বলেছেন, যে ভেড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে, ফেরেশতা জিবরাইল নিয়ে এসেছেন এবং ছেলে কোরবানির বিরাট পরীক্ষার বিনিময়ে প্রাপ্ত হয়েছেন, তা তো মর্যাদার দিক দিয়ে বিরাট হবেই। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী, এই পশু আদম (আ.)-এর ছেলে হাবিলের কোরবানির ভেড়া, যা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছিল। দীর্ঘ চল্লিশটি বসন্তু বেহেশতের বাগানে প্রতিপালিত হয়েছে আর ইসমাইল (আ.)-এর বেলায় দ্বিতীয়বার কবুল হয়েছে, তা তো বিরাট নামে আখ্যায়িত হবেই।
তাফসিরের কিতাবে আছে, ‘হে ইবরাহিম, নামে গায়েবি আওয়াজ শোনার পর ইবরাহিম (আ.) যখন ওপরের দিকে তাকান, তখন দেখেন যে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) দÐায়মান। তার সঙ্গে সফেদ রঙের শিঙযুক্ত মোটাসোটা একটি ভেড়া। জিবরাইল বললেন, এই পশু আপনার ছেলের বিনিময়ে আপনার জন্য উৎসর্গিত। আপনি ইসমাইলের পরিবর্তে এটি জবাই করুন। তখনই জিবরাইল বলছিলেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।’ ইবরাহিম তার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ আর ইসমাইল বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ এই তাকবির ঈদের দিনগুলোতে ও হজের মানাসিক চলাকালে পাঠ করার রেওয়াজ শুরু হয় তখন থেকে। (‘বেজিবহিন আজিম’ আয়াতাংশের তাফসির দ্রষ্টব্দ তাফসিরে কাশফুল আসরার, খাজা আব্দুল্লাহ আনসারি ও রশিদ উদ্দিন মাইবেদি-তে)
প্রত্যেক ফরজ নামাজের সালামের পর পরই কোনো কথাবার্তা বা নামাজ পরিপন্থি কোনো কাজ করার আগেই তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। ইমাম তাকবির বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদিরা ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরা তাকবির বলবেন।