অনলাইন সংস্করণ
২১:৩৪, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
ময়মনসিংহের ভালুকায় পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের পরিবারের পাশে সরকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মংমনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামে দীপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এ সময় দীপু দাসের বাবা রবি চন্দ্র দাস নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টার কাছে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, দীপু দাসের সন্তান ও স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করল। আমি আসার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। পরিবারের কী চাহিদা, তা পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে নিরূপণ করা হবে। আমাদের স্থানীয় প্রশাসন আছে, তাদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বসবাস করে আসছে। একটি রাষ্ট্র ও সমাজ হিসেবে আমরা সব ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি। যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্যের প্রতি সম্মান বজায় রেখে করা হয়। মতের আপত্তির মুহূর্তেও কোনো ব্যক্তি আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার রাখেন না। বাংলাদেশ একটি আইনশাসিত রাষ্ট্র। অভিযোগ তদন্ত করা ও দায় নির্ধারণ করার একমাত্র কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বাস বা মতের পার্থক্য কখনো সহিংসতার কারণ হতে পারে না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস অপরাধ। এর কোনো অজুহাত নেই। আমাদের সমাজে এর কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ সরকার এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অভিযোগ, গুজব বা বিশ্বাসগত পার্থক্য— এ ধরনের বর্বরতার অজুহাত হতে পারে না। আইনের শাসন বজায় রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ঘটনায় জড়িত ১২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং যারা দায়ী, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন তার পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবে।
সি আর আবরার বলেন, ধর্ম বা পরিচয়নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। একই সঙ্গে রাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সমাজ একসঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করবে, যেন সহিংসতা কখনোই সহ্য করা না হয় বা জায়গা করে নিতে না পারে। বর্তমানে কিছু দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী বিভাজন সৃষ্টি ও অস্থিরতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন, তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম নাজমুস ছালেহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তার ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে গত শুক্রবার অজ্ঞাতপরিচয় ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
এদিকে, নিহত দীপু চন্দ্রের পরিবারকে অর্থসহায়তা দিয়েছে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ। মঙ্গলবার দুপুরে দীপু চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকার অর্থসহায়তার চেক তুলে দেওয়া হয়। এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আশুতোষ দাশ, কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়ন রবিশংকর আচার্য্য, চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গের সাধারণ সম্পাদক সুমন ঘোষ বাদশা প্রমুখ উপস্থিত।