
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগে (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ছাত্রশিবির কর্মীদের লুকিয়ে থাকার অভিযোগ এনেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের। একইসঙ্গে ওই শিবির কর্মীদের বাঁচাতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সহায়তা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন সাদিক কায়েম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘বিপ্লবের পর দুইটি কনসার্ন ছিল। প্রথমটি ছিল অপরাধের বিচার। দ্বিতীয়টি ছিল বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া। সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানান যে, "তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশবশত মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।" স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ—তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্যগুলো ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ভেরিফাই করাটা জরুরি ছিল। তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে আমি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের এক সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি অধিকতর তদন্তের জন্য। তাদেরকে বলেছি, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না—এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।’’
রোববার (৩ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন আবদুল কাদের। সঙ্গে সাদিক কায়েমের একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট জুড়ে দেন তিনি। এর জবাবে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর ফেসবুক পোস্ট করেন সাদিক কায়েম। সেখানে তিনি এসব অভিযোগের জবাব দেন।
সাদিক কায়েমের পোস্টটি আলোকিত বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘‘১. বিপ্লবের পর দুইটি কনসার্ন ছিল। প্রথমটি ছিল অপরাধের বিচার। দ্বিতীয়টি ছিল বিচারের নামে নিরীহ কোনো ব্যক্তির হয়রানি না হওয়া। সে সময় অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানান যে, "তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থাকলেও কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেননি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশবশত মামলায় তাদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।"
স্বাভাবিকভাবেই গণহারে মামলার আশঙ্কা থাকলে কে অপরাধী আর কে নিরপরাধ—তা যাচাই করার জন্য আন্দোলনে সক্রিয় নানা স্টেকহোল্ডারের কাছে তথ্যগুলো ফরওয়ার্ড করে পারস্পরিক ফিডব্যাকের ভিত্তিতে ভেরিফাই করাটা জরুরি ছিল। তাই বেশ কয়েকটি কনসার্ন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়ে আমি এনসিপি নেতা ও সংস্কার কমিশনের এক সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি অধিকতর তদন্তের জন্য।
তাদেরকে বলেছি, এমন একটি দাবি এসেছে যে তারা হামলায় যুক্ত ছিলেন না—এই দাবিটি খতিয়ে দেখতে, যাতে অসচেতনতা বশত নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।
২. এনসিপি থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই সেসময় এরকম বিভিন্ন সুপারিশ পেয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন ভেরিফাই করার জন্য।
আব্দুল কাদের নিজেই উল্লেখ করেছেন, মামলার তালিকাগুলো আমরা পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করেছি। এখন, নিজেদের মধ্যে কথা না বললে কীভাবে জানব—আসলে কেউ অপরাধী, নাকি তাকে হয়রানি করা হচ্ছে?
৩. স্ক্রিনশটে যাদের নাম যুক্ত আছে, তারা কেউই শিবিরের কেউ না। ৫ আগস্টের পর থেকেও তারা শিবিরের কোনো পদে বা কর্মসূচিতে ছিলেন না।
ফলে, ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তা করার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
৪. সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে আমি নাকি বিভিন্ন জায়গায় কল করেছি—এটাও একটি মিথ্যা। সাঈদী অপরাধী, এবং তাকে বাঁচানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।
৫. মুহসিন হলের একজনের সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত শাহাদাতকে আমি চিনিই না। তাছাড়া, কাদের লিখেছে, “চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ওই পোস্টদাতার সাথে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।”
আচ্ছা, আমি যদি ফোন দিতেই চাইতাম, তাহলে তো সেটা মামলা হওয়ার আগেই দেওয়ার কথা ছিল। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেই পোস্টদাতাকে ফোন দেওয়ার কী দরকার!
এলাকায় থাকতে কোনো সময় শিবির করেছে, তামিরুল মিল্লাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিবিরের কোনো আয়োজনে অংশ নিয়েছে, শিবিরের নেতা হিসেবে বা শিবির কানেকশন ব্যবহার করে জুলাইয়ের বড় নেতাও হয়েছে—কিন্তু এখন উগ্র শিবিরবিদ্বেষী—এমন মানুষের সংখ্যাও কম না।
যদি জীবনের কোনো এক ধাপে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিবিরের সাথে যোগাযোগ রাখে, পরবর্তীতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরবিরোধী ভূমিকা নেয় অথবা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়—এবং, এমন নরপশুদের কর্তৃক ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা নিয়মিত ভিক্টিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার যদি শিবিরকে নিতে হয়, তাহলে শিবির ছেড়ে বাগছাস-এনসিপিতে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের কৃতিত্ব, দুর্নীতি সহ অন্যান্য নেতিবাচক ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায়ভারও তো শিবিরকে নিতে হবে! সেটা কি যৌক্তিক হবে ’’
এছাড়া, পোস্টটির কমেন্টে তিনি যোগ করেন—
‘‘উল্লেখ্য, কাদের যে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করেছেন সেই চ্যাট আব্দুল কাদেরের সাথে হয়নি। তা হয়েছে এনসিপির অন্য ব্যক্তিদের সাথে। আরেকজন ব্যক্তির সাথে হওয়া চ্যাটের স্ক্রিনশট আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে অপব্যাখ্যা সহকারে পাবলিকলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার মাধ্যমে ঘৃণ্যতম সংস্কৃতির সূচনা হলো।
এভাবে ব্যক্তিগত ফায়দা নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আলাপ বা প্রাইভেট ইনফরমেশন সামনে আনার সংস্কৃতি তৈরি হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অবিশ্বাস, অনাস্থার সৃষ্টি হবে। যা দীর্ঘ মেয়াদে গোটা জাতির জন্যই ক্ষতি বয়ে আনবে।
তাছাড়া স্ক্রিনশট পলিটিক্স শুরু হলে এনসিপি-বাগছাসে থেকে দিনরাত শিবির ব্যাশিং করা অনেকেরই রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নাই হয়ে যেতে পারে!’’ছাত্রশিবির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে করা আব্দুল কাদেরের পোস্টটিও হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘‘গতকালের ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার অবস্থান—গতকালের ঐ কমেন্টে আমি মূলত বুঝাতে চেয়েছি, হলে থাকার কারণে শিবিরের যে ছেলেগুলা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করতো, তারা মূলত আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকে উৎরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াতো। সেটা কেবল নিজেকে লীগার প্রমাণের দায় থেকে। লীগ যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাতো তারা সেগুলার অংশীদার হতো, লীগের কালচার-ই চর্চা করত। আমার এই কথাটা অস্বীকার করার সুযোগ নাই, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি তো এমন ছিল।
আরেকজন ব্যক্তি আরমান হোসাইন ১৫-ই জুলাই কেন্দ্রিক তার করা মামলার অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করেছেন যে, শিবির থেকে আসা ছাত্রলীগের কয়েকজন ১৫ তারিখের হামলায় জড়িত ছিল।
এই দুইটা কমেন্ট'কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ তিলকে তাল বানিয়ে নিজেরা দায়মুক্তি নেওয়ার কূটচাল চেলেছে। সেটাকে আবার শিবির খুবই নোংরাভাবে প্রচার করেছে, ভিন্নভাবে ফ্রেমিং করার মধ্য দিয়ে।
আমি বলেছি, শিবির করে আসা ছেলেরা নিজেকে ছাত্রলীগার প্রমাণ করার জন্য ক্ষেত্রবিশেষ উগ্রবাদী ছিল। ২৩ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলের শাহরিয়াদ নামে ১৯-২০ সেশনের একজন শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন মাজেদুর রহমান নামে একজন। যিনি আমার পাশের এলাকার। একই মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে জানতাম, তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। ক্যাম্পাসে এসে বনে গেলেন ভয়ংকর নিপীড়ক, নির্যাতক!
ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সর্বশেষ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ১৭-১৮ সেশনের মুসাদ্দিক বিল্লাহ, আমার জেলার। যার পরিবার জামাত, যিনি শিবিরের সাথী ছিলেন; কিন্তু পদপদবীর জন্য তিনি হয়ে গেলেন কট্টর ছাত্রলীগ। ইতিপূর্বে কোনো কমিটিতে না থেকেও তিনি সরাসরি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেন। তাহলে চিন্তা করেন, তাকে কতটা বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হইছে, কতটা ছাত্রলীগের চরিত্র ধারণ করতে হইছে!
জসীমউদ্দিন হলের১৬-১৭ সেশনের আফজালুন নাঈম। গেস্টরুমে তার দুর্ব্যবহার, নিপীড়নের জ্বালায় হলের ছেলেরা অতিষ্ঠ ছিল। নাঈমের দুর্ব্যবহারের কথা হলের ছেলেদের মুখে মুখে। অথচ এই নাঈম এখন জামাত শিবিরের আইকন শিশির মুনিরের বিশেষ সহকারী!
মুজিব হলের জুনিয়রদের কাছে এক ত্রাসের নাম ছিল ১৬-১৭ সেশনের ইলিয়াস হোসাইন। সঞ্জিতের রাজনীতি করত ইলিয়াস, হল ক্যান্ডিডেট ছিল।
মিছিল মিটিং এ যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সর্বোচ্চ ফোর্স করতো, গেস্টরুমে অসহ্যকর মেন্টাল টর্চার করতো, ছাত্রলীগের পদও পেয়েছিল। ৫-ই আগস্ট পরবর্তীতে এই ইলিয়াস শিবিরের বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলো, চলাফেরা করেন এখন শিবিরের ইমামদের সাথে!
২০১৭ সালে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ইসলামিক পেজে লাইক দেওয়ায় শিবির সন্দেহে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে রক্তাক্ত করে হল ছাড়া করা হয়। এ ঘটনায় ১৩ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মুহসীন হলের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল ভুক্তভোগীর মোবাইল চ্যাক করেন এবং সাথে সাথেই অতর্কিত হামলা চালান। এই শাহাদাত আবার শিবির হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত ছিল। চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তীতে ঐ পোস্টকারীর সাথে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন। শাহাদাৎ ভালো মানুষ, তাকে যেনো এসবের সাথে না জড়ায়!
শিবিরের স্ট্র্যাটিজির জায়গা থেকে ওরা ছাত্রলীগের বড় পদে নিতো। হল ক্যান্ডিডেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট হওয়ার কারণে তাকে ছাত্রলীগ যে স্টাইলে কার্যক্রম পরিচালনা করে, ঠিক সেই স্টাইল ফলো করা লাগতো৷ শিক্ষার্থীদেরকে গণরুম, গেস্টরুম, জোরপূর্বক মিছিল মিটিং এ ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা একিনের সাথে করতেন তারা। উদ্দেশ্য একটাই পদ পাইতেই হবে।
ছাত্রলীগের হল ক্যান্ডিডেটদের পেছনে আবার কিছু গুপ্ত শিবির থাকতো। এরা তেলবাজি আর চাটুকারিতায় ছিল অনন্য। এরা সবকিছু আগ বাড়িয়ে আনজাম দিতো। ভাই কখন কোথায় আসবে, কখন ভাইটাল প্রোগ্রাম, সেটার তাগিদ দিয়ে, জোরপূর্বক ছেলেপেলেদেরকে হাজির করার দায়িত্ব নিতো এই প্রকৃতির শিবিররা।
এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা একজন হচ্ছে জহু হলের ২১-২২ সেশনের হাসানুল বান্না, যিনি ৫-ই আগস্টের পরে শিবিরের সদস্য সম্মেলনে গিয়ে নিজেকে সদস্য হিসেবে প্রকাশ করেন। আবার এই বান্না এখন শিবিরের জহু হল শাখার বড় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
আরেকজন আছেন এমন। এফ রহমান হলের ১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ার দরুন হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলা যিনি নিজে লিখে দিতেন, সারাক্ষণ ক্যান্ডিডেটের আগেপিছে থাকতেন, কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এফ রহমানের হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান। তবে আগের আইডি এবং তার কৃতকর্ম মুছে ফেলতে পারেন নাই। এখনো আছে।
এবার আসি মূল আলাপে-
৫ তারিখের পরে শিবিরের যে সকল ছেলেপেলে ছাত্রলীগের ভেতরে থেকে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে জনাব সাদিক কায়েমের সাথে আমার আলাপ হয়। ৫ তারিখের পরে হলে হলে, ছাত্রলীগের নিপীড়কদের লিস্ট হচ্ছিল। একদিন ফোনে এই বিষয়ে কথা বলার প্রেক্ষিতে সাদিক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, একাত্তর হলের হাসান সাঈদী, এফ রহমানের তানভীর হাসান শান্তের মতো শিবিরের যারা লীগের আমলে অপকর্ম করছে, তাদেরকে মামলা দিবেন না? প্রতিত্তোরে উনি বললেন, তোমরা দাও।
আমি বললাম, "আমরা আর তোমরা দেওয়ার কি আছে! লিস্ট তো আমরা আপনারা মিলেই করতেছি।" এই বিষয়ে সাদিক ভাইয়ের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়; কিন্তু শেষে আর হাসান সাঈদী কিংবা শান্তদের নাম মামলার তালিকায় উঠলো না!
এই সাঈদি ছিল শিবিরের সাথী। পরে একাত্তর হল ছাত্রলীগের সাথে জড়িয়ে গেছে। এমন কোনো অপকর্ম নাই যে সে করে নাই। ও একাত্তর হলের কুখ্যাত স/ন্ত্রা/সী আবু ইউনুসের রাজনীতি করতো। শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে তারে পোস্ট পদবি দেয়নি দীর্ঘদিন। সে হতাশায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। নিজেকে লীগার প্রমাণ করার জন্য সে আরো উগ্রো পন্থা বেচে নিল। একে তো শিবির সংশ্লিষ্টতা, তার উপর নিজের নাম সাঈদী হওয়ার কারণে পদ পদবী পাচ্ছে না, সেজন্য কাগজপত্রে নাম পরিবর্তন করে সাঈদ বানিয়েছেন তিনি! অবশেষে সে হীন কর্মকাণ্ডের মধ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ , একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক হয়। তারপর সৈকতের রাজনীতি করা শুরু করে, হল ক্যান্ডিডেট ছিল।
চব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে এই সাঈদি সহ আরো কয়েকজন ছাত্রলীগার মিলে দুইজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে এসে মুহসীন হলে ৩ দিন ধরে আটকে রাখেন। ঐ ঘটনায় সাঈদী গ্রেপ্তার হয়, বহিষ্কৃতও হয় ছাত্রলীগ থেকে। কিন্তু বের হয়ে সে তার অপকর্ম এবং ছাত্রলীগের রাজনীতি চালিয়ে যায়। জুলাইয়ের ১৫ তারিখে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হওয়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে সাঈদী সেখানে গিয়েও আহতদের উপর হামলা করে! যার ভিডিও ফুটেজ এখনো আছে। অথচ এই সাঈদি ৫ তারিখের পরে আইনের আওতার বাহিরে ছিল,ফেসবুকে শিবিরের গুণগান গাওয়া শুরু করে দিয়েছিল।
এরপর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সাঈদি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সাঈদি FBS এর ফাইন্যান্স ডিপার্ট্মেন্টের শিক্ষার্থী; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ক্যাম্পাসের বাহিরে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে। সেখানকার শিক্ষার্থীরা দেখে ফেলার পরে তারা এই সাঈদীকে আটক করে। কিন্তু সাঈদীকে আটক করার পরে শিক্ষার্থীদের কাছে শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সভাপতি সাদিক কায়েম ফোন দিয়ে তদবির করেন, যেনো সাঈদিকে ছেড়ে দেওয়া হয়!
শিক্ষার্থীরা সাদিক কায়েমের তদবির শুনেন নাই, থানায় নিয়ে আসে সাঈদীকে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও মামলা নিতে চান না। ঐ সময়টাতে শিবিরের আরেক দায়িত্বশীলও নাকি প্রক্টরের সাথেও একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। নিজ এলাকার, নিজ সংগঠনের সাঈদীকে বাঁচানোর জন্য৷ অবশেষে শিক্ষার্থীদের অনমনীয়তার মুখে সাঈদীকে মামলার আওতায় নেয় থানা পুলিশ। কিন্তু এই সাঈদী সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় জেল থেকে বের হয়ে আসে! অথচ জুলাইয়ের মামলার আসামীর নাকি জামিন হয় না সহজে! তাহলে চিন্তা করলাম, এদের লিংক লবিং কোন পর্যায়ে!
ছাত্রলীগের ভিতরে ঢুকে ছাত্রলীগের কালচার চর্চা করা এমন গুপ্ত শিবিরের সংখ্যা কিন্তু কম ছিল না।
৫-ই আগস্টের পরে হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি হয়, শৃঙ্খলা কমিটি হয়, এটা কার প্রেসক্রিপশনে হয়, সেটা প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখলেই বুঝা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে অনলাইনে ভোটাভুটি করে অধিকাংশ ব্যাচ প্রতিনিধি শিবির নিজেদের লোকজনকে নির্বাচিত করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই পরবর্তীতে সর্বেসর্বা হয়ে উঠে, একপ্রকার ছায়া প্রশাসন হিসেবে হলে ফাংশন করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই আবার ৫ তারিখে পরে ছাত্রলীগের নাম তালিকা তৈরির দায়িত্ব নেয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের সাথী ভাইদেরকে তালিকার বাহিরে রাখে।
৫- ই আগস্টের পরে জুলাইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে দুইটা মামলা হয়। মাহিম সরকার এবং আরমান হোসেন বাদী হয়ে এই দুইটা মামলা করেন। এই দুই মামলার বাদীর সাথেই শিবিরের সাদিক কায়েম সরাসরি দেখা করে কয়েকজন ব্যক্তির ব্যাপারে তদবির করেন। মাহিন এবং আরমানকে একটা তালিকাও দেন , যেনো এই ব্যক্তিগুলার নাম মামলা থেকে কেটে দেয়, সেই বিষয়ে সাদিক কায়েম সরাসরি তদবির করেন। আরমান পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখেন, সাদিক কায়েম যে নামগুলা দিছেন, তারা শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট। এরমধ্যে একজম আসামী আরমানের কাছে স্বীকারও করছেন, তিনি শিবির করেন, তার নাম যেনো মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়!
জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা করা যায় নাই এই তদবির কাণ্ডের কারণে, সবাই সবার দলীয় মানুষজনকে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে দিছে।
শিবির অস্বীকার করতেছে, তাদের কোনো নেতাকর্মী গুপ্তভাবে লীগের ভেতরে ঢুকে লীগের কালচার চর্চা করে নাই। তারা আমাদের কাছে প্রমান চাচ্ছে; কিন্তু শিবির তাদের বিগত একযুগের হল কমিটি এবং ঢাবি শাখার কমিটি প্রকাশ করুক। তাহলেই তো মানুষজন ক্লিয়ার হতে পারে, শিবির ছিল কি; ছিলো না। বর্তমানের হল কমিটিও তো প্রকাশ করতে পারে। ৫ তারিখের পর তাদের
ভয় কিসের? নাকি তাদের কৃতকর্ম প্রকাশ হয়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রকাশ করতেছে না! হলে হলে এখন শিবিরের হয়ে মাতব্বরি করা মানুষের পূর্বের চেহারা প্রকাশ হয়ে যাবে!
অনেকেই হয়তো ভয়ের আশংকা দেখাচ্ছেন, সংঘবদ্ধভাবে ওরা মিডিয়ায় চরিত্র হনন করতেছে ক্রমাগত; কিন্তু আমি হার মানার পাত্র না। হাসিনার আমলে গুটিকয়েকজন মানুষ লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিল। হামলা-মামলা, জেল জুলুম সহ্য করে টিকে গিয়েছিলাম একটা সুন্দর সত্য রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই লড়াই চালিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ। সেটা আমি একা হলেও। (ছবিতে সাদিক কায়েম যে মামলার বিষয়ে বাদী'কে তদবির করেছেন, সেটার স্ক্রিনশট যুক্ত করা হলো ’’