ঢাকা রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফটিকছড়ির অবৈধ ইটভাটায় যাচ্ছে টপ সয়েল, কাঠ

ফটিকছড়ির অবৈধ ইটভাটায় যাচ্ছে টপ সয়েল, কাঠ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ৫৭টি ইটভাটায় নিয়মনীতি না মেনে পোড়ানো হচ্ছে সরকারি বনাঞ্চলের কাঠ। কয়লার মাধ্যমে পোড়ানোর চাইতে লাভ বেশি হওয়ায় কাঠ ব্যবহারের দিকে মনোযোগ ভাটি মালিকদের। কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভাটি মালিকরা ইট পোড়ানোর কাজে প্রতিনিয়ত কাঠ ব্যাবহার করে চলেছেন। উপজেলার অধিকাংশ ইট ভাটায় দিনের পর দিন কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অব্যাহত থাকায় পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনিভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে স্থানীয় অধিবাসিদের। পাশাপাশি ভাটিগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত কাঠ পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণসহ কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া ফসলি জমির ওপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু-একটি ভাটায় অভিযান চালালেও প্রতিকার মিলছে না।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম হারুয়ালছড়িতে কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ইটভাটার চিমনি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয় এবং জরিমানা করা হলেও পুনরায় প্রশাসনকে বৃদ্ধ আঙ্গুলি দেখিয়ে এসব ইটভাটা চালু করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে জমির টপ সয়েল। ইটভাটা আইনের ধারা ৮ অনুযায়ী, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং ডিগ্রেডেড এয়ারশেড এলাকায় ভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ ফটিকছড়ি অঞ্চলের প্রায় ভাটাই এই আইনের পরিপন্থী। এছাড়া পাইন্দং ইউনিয়নে বনের পাশেই এসবি ব্রিকস এবং এএমবি ব্রিকস নামের দুটি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলতে দেখা যায়।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে আরও বলা হয়েছে, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে বা জরিমানা গুনেই ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। এমনকি গত বছর পাইন্দং ইউনিয়নে একাধিক ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে চিমনি ধ্বংস করে দিলেও ফের এসব ভাটায় নতুনভাবে তৈরি করে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী র্কাযক্রম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভাটি মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, সরকারি নিয়ম মেনে ভাটি স্থাপন করে ইট তৈরি করতে গেলে খরচ ও সময় বেশি ব্যয় হয়ে থাকে। সে তুলনায় লাভ কম। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোতে আর্থিক লাভ এবং সময দুটির সাশ্রয় হয়। যার কারণে ভাটি মালিকরা ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। ফটিকছড়ি ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন- পাইন্দংয়ে টপ সয়েল কাটার বিষয়ে শুনেছি, সিন্ডিকেট করে এসব কাজ করছে। ইটভাটায় বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, ফটিকছড়ির মাটি খুবই উর্বর। জৈব সারের চেয়েও শক্তিশালী। জমির উপরিভাগের মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার হয়।

উপরিভাগের এই মাটিই সবচেয়ে উর্বর ও ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। ফলে টপ সয়েল অপসারণ কৃষির জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে জমির মালিক এবং ইটভাটার মালিক উভয় সচেতন হওয়া জরুরি’। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘৫৭টির ইটভাটার মধ্যে ১০টি লাইসেন্সবিহীন।

বাকিগুলো চালু রয়েছে। তারা পুনরায় লাইন্সেস আবেদন করেছে। কিন্তু নবায়ন হয়নি। এ সংক্রান্তে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যে ইটভাটাগুলো চালু আছে, ওইসব ইটভাটার জন্য জমির টপ সয়েল কাটা হলে কিংবা বনাঞ্চলের কাঠ পোড়ানো হলে অভিযান চালানো হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত