চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠের খরায় কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নলকূপ (টিউবওয়েল) থেকে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় অধিকাংশ নলকূপ (টিউবওয়েল) থেকে পানি না উঠায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এতে করে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের সাধারণ মানুষ। বৈশাখের শুরু থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে আরও পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
দাউদকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস জানায়, চৈত্র মাস থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠের এ সময়ে অতিখরার কারণে পানির স্তর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি নিচে নেমে যায়। অতি খরা ও বৃষ্টি না হওয়াটাই এর অন্যতম কারণ। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে এ অঞ্চলে অনাবৃষ্টির কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, অধিক পরিমাণ বৃষ্টি হলেই পুনরায় আবার পানির স্তর উপরে উঠে গেলেই এ সংকট কমে যাবে।
দাউদকান্দি পৌর সদরসহ ১৫টি ইউনিয়নে অধিকাংশ নলকূপে (টিউবওয়েলে) পানি উঠছে না। বিশেষ করে পৌরসদর, বারপাড়া ইউনিয়ন, সুন্দলপুর ইউনিয়ন, গোয়ালমারী ইউনিয়ন, গৌরীপুর ইউনিয়ন ও বিটেশ্বর ইউনিয়নে নলকূপ থেকে পানি উঠছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন। এতে করে তীব্র পানি সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। দাউদকান্দি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের তুজারভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পপি আক্তার জানান, যেখানে আমার বাড়ি, সেখানে জনবল কম থাকায় পৌরসভার পানি বিতরণের লাইন নেই। তাই আমরা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে টিউবওয়েল থেকে আগের মতো পানি পাই না। দূর থেকে পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি আনতে হয়। পানি সংকটে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
পানি সংকটে ভোক্তভোগী কাজের বুয়া শিরিন বলেন, চৌধুরী সুপার মার্কেট সংলগ্ন স্থানে সরকারিভাবে বসানো ৫ শত ফুট টিউবওয়েল থেকে হাতে চেপে ১০ টাকা কলস খাবারের পানি বিভিন্ন বাসায় ও দোকানে দিয়ে থাকি। এতে করে আমার সংসার চলত। বর্তমানে টিউবওয়েল থেকে পরিমাণ মতো পানি উঠে না। একটি ১০ লিটারের কলস ভরতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। টিউবওয়েল চাপতে চাপতে হাত ও শরীর ব্যথা হয়ে যায়। তাই খাবার পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পানি সংকটের কারণে আমার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ভুক্তভোগী আর কয়েকজন জানান, পানি সংকটের কারণে তাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের বেঘাত ঘটছে।
দাউদকান্দির পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। এদিকে পানির স্বল্পতা ও সংকট নিরসনে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন দীর্ঘসময় পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম পানির অপচয় রোধ করতে পৌরবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রিফাইনিং ফ্যাসিলিটি স্থাপনের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। পানির চাহিদা পূরণে পৌরসভার সব পাম্প সচল রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে পানি সমস্যা নিরসনের জন্য একটি পানির পাম্প প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার অভ্যন্তরে অবৈধ পানির সংযোগ চিহ্নিত করার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।