ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দূর্গাপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

দূর্গাপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ৬নং দক্ষিণ জাগিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়টির ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, বিভিন্ন অংশে মেজে ভেঙে গেছে, দেয়ালেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ভয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরাও। প্রায় দেড় যুগ ধরে চলছে এভাবেই পাঠদান। বছর কয়েক আগে বিকল্প হিসেবে একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করা হলেও সেখানে পাঠদান করানো যায়নি। যে কারণে বাধ্য হয়ে এখন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে জরাজীর্ণ ভবনেই। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই আসছে না বিদ্যালয়টিতে, চলে যাচ্ছে অন্যত্র।

এদিকে বিদ্যালয়টির এমন পরিস্থিতি ঝিমিয়ে পড়েছে সবকিছুই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউ আসেন সকাল ১১টার পর কেউ চলে যান দুপুর ১টার পর এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এ নিয়ে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি পাকা ভবন। ভবনের চারটি কক্ষই জরাজীর্ণ। ঝুঁকি নিয়েই চলছে পাঠদান ও পাঠগ্রহণ। শিক্ষকদের অফিস কক্ষেরও করুণ দশা। প্রথম শিফটের প্রথম শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী মোট ১০ জন। কিন্তু উপস্থিতি দেখা মেলে তিনজনের। এই তিনজনের পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষিকা হাফসা সিদ্দিকা। বিদ্যালয়টিতে নেই সবার ভালোমানের বেঞ্চ।

প্রতি মুহূর্তেই পলেস্তারা খসে পড়ছে যার কারণে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলছেন এই শিক্ষিকা। অপরদিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঁচ শিক্ষার্থী বসে রয়েছে কিন্তু শ্রেণি শিক্ষক আছেন ছুটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে ৬নং দক্ষিণ জাগির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ ৬ পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। একজন শিক্ষককে ডিপোটেশনে উপজেলা শিক্ষা অফিসে নেওয়া হয়েছে। আরেক শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত থাকায় বাকি তিনজন দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। অপরদিকে বিদ্যালয়টিতে প্রাক প্রাথমিক হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না। এর জন্য দায়ী বিদ্যালয়টির এমন পরিস্থিতি। তাই দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণের দাবি স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকের। বিদ্যালয়ে প্রথমশ্রেণির ক্লাস চলাকালে কথা হয় মিম নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর সঙ্গে। সে মনে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলে, আমরা পড়তে পারি না, আমরার বেঞ্চগুলো ভাঙা বসতে অসুবিধা হয়। আমরা নতুন ঘর আর ভালো বেঞ্চ চাই। স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ উদ্দিন নামের একজন বলেন, বর্তমান এই স্কুলের চিত্র দেখলে নিজের কাছেই কষ্ট হয়। দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। আমাদের দাবী একটি নতুন ভবন দ্রুত নির্মাণ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হাফসা সিদ্দিকী জানান, বিদ্যালয়টির ভবন অবস্থা জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের বসার রুম ও ভবনটির বাইরের প্রায় সব স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে।

সহকারী শিক্ষক এনামুল হক দায়িত্ব আছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। তিনি বলেন, আমি যোগদান করার সময় থেকেই দেখে আসছি স্কুলের এমন অবস্থা। স্কুলের ভবনের এই পরিস্থিতির জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে না। আমি শিক্ষা অফিসে জানিয়েছি আমাদের দ্রুত একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমান জানান, নতুন একটি ভবনের জন্য এরই মধ্যে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে যা অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। আশা করছি, খুব অচিরেই সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত