ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জনবল সংকটে চিকিৎসা ব্যাহত

জনবল সংকটে চিকিৎসা ব্যাহত

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা এখন এক ভয়াবহ দুর্দশার নামান্তর। প্রতিদিন গড়ে ৯০০ রোগী রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছেন। অথচ, এই বিপুল চাপ সামলাতে কর্মরত মাত্র ৭ জন চিকিৎসক।

অপর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সেবাপ্রদান কার্যত ভেঙে পড়েছে। রোগীরা এখন কার্যত ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট। ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ৩১ শয্যা থেকে উন্নীত করা হলেও জনবল ও অবকাঠামো সম্প্রসারণ হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে জনবল সংকট চলছেই। হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম বলেন, প্রায় সারে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা মাত্র ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে চালাতে হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৯০০ রোগী দেখা, ভর্তি রোগী সামলানো, অপারেশন করা- সবই করতে হয় আমাদের। প্রায় দুই বছর ধরে কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই, ফলে গর্ভবতী নারীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি জানান, গর্ভবতী মায়েদের প্রয়োজনীয় অপারেশন (সিজারিয়ান) অনেক সময় তিনিই বাধ্য হয়ে করছেন, যদিও এটি তার মূল দায়িত্ব নয়। হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক বিগত এক দশক ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাদের পদ শূন্য না দেখানোয় নতুন নিয়োগও দেওয়া যাচ্ছে না, ফলে অব্যাহত রয়েছে চিকিৎসক সংকট। রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০টি নার্স পদের মধ্যে ২১টি শূন্য। মাত্র ৯ জন নার্স দিয়ে ৫টি ওয়ার্ড চালানো হচ্ছে। রোগীদের স্থানাভাবে অনেক সময় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।

একজন সিনিয়র নার্স বলেন, একাই শিশু, প্রসূতি ও মেডিসিন ওয়ার্ড সামলাতে হচ্ছে। ২-৩ জন নার্স দিয়ে প্রতি শিফটে এত রোগী সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে কোনো ইলেকট্রিশিয়ান নেই। ফলে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বাহির থেকে লোক ডেকে আনতে হয়। অধিকাংশ সময় লোক না পেলে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ সমস্যায় ভুগতে হয়। দীর্ঘ ১৯ বছর পর ২০২২ সালে এক্স-রে মেশিন চালু হলেও আজও কোনো এক্স-রে টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকরা নিজেদের চাঁদা দিয়ে বাহির থেকে একজন টেকনিশিয়ান এনে তার বেতন দিচ্ছেন। ক্লিনারের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় পুরো হাসপাতালজুড়ে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে।

বর্তমানে ঝাড়ুদার রয়েছেন মাত্র দুইজন এবং ওয়ার্ডবয় মাত্র তিনজন। রোগীদের পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেশিরভাগ পদ শূন্য থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর। ফলে সাধারণ রোগীরা বাধ্য হয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন, এতে মূল হাসপাতালের উপর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, এক্স-রে মেশিন, শিশু ও প্রসূতি ওয়ার্ডসহ আধুনিক অবকাঠামো থাকলেও দক্ষ জনবল না থাকায় সেগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

একজন টেকনিশিয়ান জানান, যন্ত্রপাতি থাকলেও চালাতে পারি না, কারণ সহযোগী জনবল নেই। আবার অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, মেরামতের উদ্যোগ নেই। রায়পুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমআর সুমন বলেন, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরো এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগ ও অনুপস্থিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রানের দাবি রায়পুরবাসীর। সাবেক কাউন্সিলর মাঈন ভূঁইয়া বলেন,সরকার অবকাঠামো দিয়েছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থাপনা না থাকায় জনগণ সঠিকভাবে সুবিধা পাচ্ছে না। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন জানান, রায়পুরের সংকট সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবগত। নিয়োগ প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত