ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় লালমনিরহাটে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে ৫ সেন্টিমিটার উপরে।

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। যদিও কয়েকদিন ধরে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা অতিক্রম করে। এরপর রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়। তবে গতকাল বুধবার সকালে পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপৎসীমার খুব খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। পানির এ আসা যাওয়ার খেলায় ভারত নিয়ন্ত্রিত গজলডোবা ব্যারেজকে দায়ী করেছেন তিস্তাতীরের মানুষজন। তারা বলছেন, হঠাৎ পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় ভারত।

এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নদী সংলগ্ন ৮৯টি চরে মানুষের মাঝে। তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি; ভেসে গেছে মাছের ঘের।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজে এলাকার মোতাল হোসেন ও বাবুল মিয়া বলেন, আমরা নদী পাড়ের মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন ভারত গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয়। বিশেষ করে ভারতের উজানে যে গেট রয়েছে তার নাম গজলডোবা এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। খরা মৌসুমে গেটটি বন্ধ রাখা হয় আর বর্ষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় ভারত। কারণ বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয় না, বন্যা হয় ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে।

দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচাজ নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তিস্তার পানি গত মঙ্গলবার রাতে বিপদসীমার ৫ সিন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে গতকাল বুধবার সকালে পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি উঠানামা করছে, পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, পানি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো- পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী; সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন। খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা মালেকা বেগম বলেন, হঠাৎ পানি বেড়ে গেছে। অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে গেছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন গ্রামের আলাী মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকায় রান্না বন্ধ হয়ে গেছে।

তিস্তা নদী লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সামান্য পানি বাড়লেই পুরো জেলাজুড়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও নতুন নতুন এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। মহিষখোচা ইউনিয়নের বাসিন্দা আপাজ উদ্দিন বলেন, উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। এরইমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন গ্রামের মিজানুর বলেন, উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু বাড়ি এরইমধ্যে পানিবন্দি। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বড় বন্যার ভয় করছি। এ বছর এখনও বড় বন্যা হয়নি। পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। নিম্নাঞ্চল অনেকগুলো প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে পানি কমছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। এরইমধ্যে পানিবন্দি মানুষের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত