
ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বিদায়ী সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান। সরকারি অর্থ অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহারের দায় স্বীকার করে তিনি ফেরত দিয়েছেন মোট ৬৫ হাজার টাকা সততার বিরল উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা কুড়াচ্ছে সর্বমহলে। দীর্ঘ ৯ বছর ৩ মাস ১১ দিন সোনাগাজী উপজেলায় দায়িত্ব পালন শেষে তিনি সম্প্রতি বদলি হয়ে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় যোগদান করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি শিক্ষাখাতে নানা সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন- যেমন মা সমাবেশ, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এসব আয়োজনে সরকারি আপ্যায়নের নির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলেও অনেক সময় শিক্ষকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা চালিয়ে থাকেন। তবে ওয়াহিদুর রহমান যোগদানের পরই প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দেন সরকারি অর্থে কোনো আপ্যায়ন আয়োজন করা যাবে না। তবুও তার অজ্ঞাতসারে কোথাও সরকারি অর্থে কোনো আপ্যায়ন হয়ে থাকলে তার দায় নিয়ে তিনি নিজ থেকেই গত বুধবার সোনাগাজী সোনালী ব্যাংক শাখায় চালানের মাধ্যমে ৬৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। এর মধ্যে রয়েছে, খাবারের খরচ বাবদ (সম্ভাব্য) : ৫৬,৬০০ টাকা, ২০১৬ সালের একটি প্রশিক্ষণে ২১০ জন উদ্বৃত্ত অংশগ্রহণকারীর জন্য : ৮,৪০০ টাকা। নিজ উদ্যোগে এমন অর্থ ফেরতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি দুঃখিত। আমি চাই না, আমার মতো কারও কাছ থেকেই সরকারের একটি টাকাও অপচয় হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই অর্থ জনগণের রক্ত-ঘামে অর্জিত। তিনি আরও বলেন, নিজ নিজ অবস্থান থেকে যদি আমরা সততা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই, তবে প্রশাসনিক দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে। আমাদের কালচার বদলাতে হবে-এটাই সময়। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম তাহেরুল ইসলাম বলেন, সততার এমন বাস্তব প্রয়োগ প্রশাসনের জন্য একটি বড় শিক্ষা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা বলেন, এটি কেবল অর্থ ফেরতের বিষয় নয়, বরং এটি একটি মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, তার এই সাহসী পদক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের জন্য গর্বের বিষয় এবং আগামী দিনের কর্মকর্তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চায় ওয়াহিদুর রহমানের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।