
তাসলিমা আক্তারের বাড়ির আঙিনায় হাঁটুসমান পানি। আঙিনা পেরিয়ে সেই পানি প্রবেশ করেছে ঘরের প্রতিটি কক্ষেও। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে রান্নাসহ ঘরের অন্য কাজ করছিলেন তিনি, ছেলেমেয়েরা ছিল বিছানার ওপর। তাসলিমা আক্তারের মতো একই রকম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের চরনিখলা এলাকার শতাধিক পরিবার। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব বাড়িঘর, রাস্তা কিংবা আঙিনায় পানি প্রবেশ করে। এ পানি সহজে নামতেও চায় না। প্রায় দুই বছর ধরে এমন অসহনীয় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির ভুক্তভোগী তারা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার প্রতিকার চেয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই বৃষ্টি যেন তাদের কাছে আতঙ্কের আরেক নাম।
তাসলিমা আক্তার জানান, বৃষ্টি হইলেই আমরা আতঙ্কের মইধ্যে থাকি। ঘরের ভেতর এই বুঝি পানি ঢুকে পড়ল! গত সপ্তাহ টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হইছে। সেই বৃষ্টির পানিই এলাকার ঘরে ঘরে ঢুকেছে; আর নেমে যায়নি। এক সপ্তাহ যাবৎ ঘরের মইধ্যে পানি। রাইতের বেলা সাপ-পোকামাকড় ঢুকে পড়ে। বিছানায় উঠে বসে থাকা লাগে। আমরা এক রহম বানভাসির মতোই বসবাস করতাছি। আমরা চরম দুর্ভোগের মইধ্যে আছি। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের ঈদগাঁ মাঠের সামনেই চরনিখলা গামের অবস্থান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ওই সংযোগ সড়ক থেকে নামলেই হাঁটুসমান পানি। দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকায় পানির মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ভরপুর। ভাসমান আবর্জনা ও পানির দুর্গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। একেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পানি ভেঙে এলাকাটিতে প্রবেশ করতেই দেখা গেল প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও ঘরে পানি। বাসিন্দাদের অনেকেই খাটের ওপর বসে আছে।
পানিবন্দি এসব বাসিন্দাদের একজন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম মিন্টু বলেন, চরনিখলা গ্রামে আমি এবং পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন খুররম ভাই থাকায় এখানে বিএনপির একটি ভোটব্যাংক আছে যার ফলে বিগত ফ্যাসিস্ট মেয়রদের এই জলাবদ্ধতার বিষয়ে যতবারই অবগত করা হয়েছে ততবারই আমরা অপারগ হয়েছি। শুধু তাই নয় পৌরসবার বাতি নষ্ট হলে একাধিকবার জানালেও দায়িত্বরতরা কর্ণপাত করতোনা।
বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে এসিল্যান্ড মহোদয় যদি এদিকে একটু দৃষ্টি দেন তাহলে শতাধিক পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরবে। গত দুই বছর ধরে এই সমস্যার মধ্যে আছেন বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে বানভাসিদের মতো বসবাস করতে হয়। এলাকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান সবাই।
আমি নতুন এসেছি, এখনও অফিশিয়ালি পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। আপনার মাধ্যমে ওই এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। শিগগিরই এলাকাটির জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস।