
বছরের পর বছর স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে ঘুরেও চলাচলের জন্য নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে নিজেরাই ৮০ ফুট লম্বা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছে কান্দাপাড়া গ্রামবাসী। গ্রামের সেতুটি নির্মাণে সবাই যার যা সাধ্য তা একত্রিত করে দিচ্ছে অর্থের যোগান। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের গাজীখালী নদী ওপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
ধানকোড়ার কান্দাপাড়া গাজীখালী নদীর ওপর সেতু না থাকায় এতোদিন কয়েকটি গ্রামের হাজারও মানুষের ভোগান্তিত ছিল। সরকারি কোনো সহযোগিতা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অর্থায়নেই তৈরি করছে সেতু।
সেতুটির ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের রমজানের ঈদের পর থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা গ্রামবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতু নির্মাণ করা হলে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা বারোবাড়িয়া, নয়াডিঙ্গি বাজারসহ কয়েকটি হাট বাজারে যাতায়াত করে বলে জানা য়ায়। সেতু না থাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতুর অভাবে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর। সেতুটি নির্মাণ হলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগের অবসান হবে। সেতুটির পিলার ও দুপাশের অংশের নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
ধামরাইয়ের ভোলানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সুমন জানায়, আমার বিদ্যালয়টি নদীর ওপারে আর বাড়ি নদীর অন্য পাড়ে। প্রতিদিন নদী প্রেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এখনও ছোট ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে সেতু না থাকায়, সেতুটি নির্মাণ হলে সবাই নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারব।
কান্দাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জিয়াসমিন বেগম (৫২) জানান ৩৬ বছর আগে এ গ্রামে বিয়ে হয়েছে তার। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে তিনি গাজীখালী নদী পারিয়ে চলাচল করেন। বর্ষার সময় চলাচলে ব্যাপক সমস্যায় পরতে হয় তাদের, বর্তমানেও নদী পারাপার হচ্ছে নৌকায়। সেতু নির্মাণের কারণে এলাকার সবার সুবিধা হবে। সেতুর নির্মাণের টাকাও দিয়েছে তারা গ্রামের সবাই।
কান্দাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম (৪৫) বলেন, অনেক মেম্বার চেয়ারম্যানসহ সরকারের নানা জায়গায় আমরা ঘুরাঘুরি করেও সেতু নির্মাণের কোনো কাজ হয় নি। আমরা গ্রামবাসী সবাই মিলে নিজের টাকা দিয়ে সেতু নির্মাণের কাজটা শুরু করছি। গ্রামের ধনী গরিব সবাই সেতুটি নির্মাণের জন্য টাকা দিয়েছে।
সেতু বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, বছরের পর বছর নানা দপ্তরে সরকারিভাবে সেতু নির্মাণ হবে সে আশায় ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। এতো বছরেও কোনো কাজ না হওয়ায়, তখন নিজেরা উদ্যোগ নিলাম নিজেদের টাকায় সেতু নির্মাণ করতে। সেতুটির ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট।
চলতি বছরের রমজানের ঈদের পর থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পিলার ও অন্যান্য কাজের জন্য এখন পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে, যতটুকু কাজ বাকি আছে আরও ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে বলে তার ধারণা, তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন তিনি।