ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিপৎসীমা থেকে এখনও সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণ ইউনিয়নের আরও তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১টিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলার নদী তীরবর্তী ৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪৩ হাজার পরিবার পাবিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার অধিকাংশ অবস্থা খুবই করুণ। গত বুধবার এই দুই ইউনিয়নের ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার আরও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত করে মোট ২১টি বিদ্যালয়ে শ্রেণি পাঠ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে বন্যার্ত পরিবারের সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ কাজ শুরু করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা শুরু হয়েছে।

পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২ আগস্ট থেকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১২.৯৫ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বিপৎসীমা থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পদ্মার শাখা মাথাভাঙা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাতের তুলনায় দিনে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশি।

ধারাবাহিক পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর এই দুই ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী পরিবারের অবস্থা খুবই করুন। পদ্মার পাড় পেরিয়ে পানি যেন লোকালয়ে প্রবেশ না করে সে জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেদিকে চোখ পড়ে শুধু পানি আর পানি। রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। একবাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাতায়াতের জন্য নৌকা বা ভেলা ব্যবহার করতে হচ্ছে। অসংখ্য বাড়ি ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। ফিলিপনগর, মরিচা, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, কলা, ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের খেতে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ১৫ হাজার, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের ২০ হাজার, ফিলিপনগর ইউনিয়নের ১১ হাজার ও মরিচা ইউনিয়নের ২৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দি অসহায় পরিবারগুলো উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ও মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়া গ্রামের জামিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কেননা নদীর পাড়ের ব্যাপক অংশ অরক্ষিত রয়েছে। যেকোনো সময় এসব অংশ নিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য জরুরিভিত্তিতে নদীর অরক্ষিত পাড় রক্ষা করা জরুরি।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মরিচ, রোপা আউশ কলা, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককের তালিকা করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশমত পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, আগের তুলনায় পানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে গেছে।

২-৩ দিনের মধ্যেই পানি কমতে শুরু হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বন্যার্থদের সহায়তার জন্য ১৮৫ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত