
দেশ যখন তথ্যপ্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই এর অপব্যবহার প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমান্তবর্তী তিস্তা নদীতে অসাধু একটি চক্র ইনভার্টার ও ব্যাটারি ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দিন-রাত মাছ নিধন করছে। ফলে শুধুমাত্র মাছই নয়, নদীর জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণিকুল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি বা ইনভার্টারের সঙ্গে বৈদ্যুতিক তার যুক্ত করে তা নদীর পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে কুচিয়া, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, শৈবালসহ ছোট-বড় সব ধরনের জলজ প্রাণি অচেতন হয়ে পানির ওপর ভেসে ওঠে। পরে অসাধু জেলেরা সেগুলো সহজেই জাল দিয়ে তুলে নেয়।
এতে রেণু ও প্রজননক্ষম মাছ নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে। সরেজমিনে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ, পূর্ব ছাতনাইয়ের ঝাড়সিংহেশ্বর, খগাখরিবাড়ির পাগলপাড়া, টেপাখরিবাড়ির জিহাদ বাজার ও তেলির বাজার, খালিশা চাপানির ছোটখাতা গ্রোয়েন বাঁধ, বাইশপুকুর, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি, আশ্রয়ন প্রকল্প ও ডনের স্পার এলাকায় প্রকাশ্যে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখা গেছে। স্থানীয় জেলে সুভাজ বলেন, ‘আগে আমাদের জালে প্রচুর মাছ উঠত। এখন সারাদিন জাল ফেলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। বৈদ্যুতিক শক দিয়েই সব শেষ করে দিচ্ছে।’ কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুধু মাছ নয়, আগে তিস্তায় কুচিয়া, ব্যাঙসহ নানা প্রাণি দেখা যেত। সেগুলো জমির উর্বরতা বাড়াত। এখন আর সেগুলো দেখা যায় না। ইলেকট্রিক শকের কারণে পরিবেশ পুরোপুরি নষ্ট হচ্ছে।’
পরিবেশবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরা সবচেয়ে বিপজ্জনক পদ্ধতি। এতে মাছের পাশাপাশি পুরো জলজ খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হয়ে যায়। মাটির উর্বরতা কমে; দীর্ঘমেয়াদে এটি কৃষি, মৎস্য ও মানবজীবনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।’ মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইলেকট্রিক শক মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করছে। রেণু মাছ মারা যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতিগুলো দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি।’ ডিমলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ (অ. দা.) বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে শুধু মাছ নয়, সব ধরনের জলজ প্রাণি ধ্বংস হয়। বিষয়টি ঠেকাতে একটি শক্তিশালী জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি তথ্যেরভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, ‘ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরা অবৈধ এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। আমরা বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। প্রয়োজন হলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’