
ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভায় বর্জ্য অপসারণ দশ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে যত্রতত্র আবর্জনার স্তুপ পড়েছে। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত জায়গা না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি। মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে প্রতিকার চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ কঠোর আন্দলনেরও হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে পৌর নাগরিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজমান।
পৌরকাসী, পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন জানান, ২০০৩ সালে সোনাগাজী পৌরসভা গঠিত হয়। এক বছর পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীণ ইউএনও কুদরত উল্যাহ মিয়া। ২০০৪ সালে নির্বাচনের মাধ্যে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন সেন্টু। তিনি পরপর দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। পরবর্তী দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর আওয়ামী লীগ নেতা খোকন ভারতে পালিয়ে যান। প্রথমে তৃতীয় ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে চালু হলেও পরবর্তীতে দ্বিতীয় শ্রেণি অর্থাৎ ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ঘোষিত হলেও গ্যাস ও বর্জ্য অপসারণের নির্ধারিত স্থান পায়নি পৌরসভাটি। এক পর্যায়ে মেয়র তার নিজ ক্ষমতা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সীমানা প্রাচীরের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করতে থাকেন। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর স্ব প্রণোদিত হয়ে মেয়রক।
বিবাদী করে ফেনীর পরিবেশ আদালতে মামলা করেন। মামলাটি আদালতে এখনএ বিচারাধীন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরপর পাউবোর নির্ধারিত স্থানের আশপাশের বাসিন্দারা পৌরসভা ঘেরাও করে কড়া ভাষায় পূর্বের নির্ধারিত স্থানে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পৌর প্রশাসক ও তৎকালীণ ইউএনও মো. কামরুল হাসান চরদরবেশ ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম বেড়ি বাঁধের পাশে গত প্রায় দশমাস ধরে ফেলা হয়েছিল। গত ১০ আগস্ট স্থানীয়রা বাধা দিয়ে বর্জ্য অপসারণের গাড়ি আটকে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেন। এর ফলে গত দশ দিন ধরে আবর্জনা ফেলা বন্ধ রয়েছে। ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করে গলি কিংবা সড়কের ওপর রেখে দেওয়া হচ্ছে। বাসা-বাড়ির মালিকরা বর্জ্যগুলো নির্ধারিত ডাস্টবিনে বস্তায় ভরে ফেলে যাচ্ছেন। এসব বর্জ্য পঁচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যার ফলে ময়লার শহরে পরিণত হয়ে সোনাগাজী পৌরসভা। পৌরসভার মালিকানাধীন নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থান থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষও দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের দায়ীত্ব পালন করছেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, বর্জ্য অপসারণের জন্য স্থান নির্ধারণ না করে পৌরসভা ঘোষণা করাই ঠিক হয়নি। এখন চাইলেও পৌর কর্তৃপক্ষ জমি ক্রয় করতে পারবেননা। পৌরবাসীর দুর্ভোগের কথা ভেবে খুব সহসাই জমি খুঁজতেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও জনবসতিহীন এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বর্জ্যরে ভাগাড় স্থাপনের চেষ্টা করছি। চার দিকের দুর্গন্ধে জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আশা করছি দুই চারদিনের মধ্যে সমাধান করতে পারবো। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান মিস্টার বলেন, দশ দিন ধরে পৌর এলাকায় বর্জ্য অপসারণ না করায়, সোনাগাজী পৌর সভা ময়লার শহরে পরিণত হয়েছে। যার ফলে চার দিকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সোনাগাজী পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও সোনাগাজী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শেখ আবদুল হান্নান বলেন, দশ দিন ধরে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ থাকায় পৌরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সোনাগাজী পৌরসভা বসবাস অযোগ্য জনপদে পরিণত হবে। ১নং ওয়ার্ডের বাখরিয়া গ্রামের মাঈন উদ্দিন ডিলার বলেন, বর্জ্য অপসারণ করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণে বাসাবাড়িতে নানা রোগও ছড়িয়ে পড়েছে। কাঁচা বাজার এলাকায় গলি ও ড্রেনে ময়লায় একাকার হয়ে গেছে। মাছ বাজারের অবস্থাও খুব খারাপ আকার ধারণ করেছে। দ্রুত জমি কিনে বর্জ্য অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সোনাগাজী পৌরসভার সাবেক মেয়র, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে জমি ক্রয় করে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। পৌরবাসী খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা বলেন, পৌর সভা নিজস্ব জমিতে বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে পৌরবাসী চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।