ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বোয়ালখালীতে বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ

বোয়ালখালীতে বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ

বোয়ালখালীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওল কচুর আবাদ। অল্প খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ওল কচুর আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৭ কেজি ওজনের ওল কচু হয়।

বাজারে ওল কচুর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০-৬০ টাকায়। অন্যান্য সবজির তুলনায় এ কচু ঔষধি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। পানি জমে থাকে না এমন উঁচু জমিতে স্বল্প পরিচর্যায় বাড়ে এ কচু। তেমন রোগ বালাই নেই। তাই সার ও কীটনাশকেরও প্রয়োজন পড়ে না। ৬-৭ মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। ফলে এ ওল কচুর আবাদে তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উন্নত জাতের কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রদর্শনীর আওতায় ৪ বছর পূর্বে অল্প কিছু জমিতে ওলকচু চাষ শুরু করেন, উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক রূপক দে। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর ওল কচুর আবাদ করছেন তিনি। এবার ২০ শতক জমিতে ওলকচুর চাষ করেছেন রূপক। একইভাবে খরণদ্বীপের কৃষক শংকর দে ও ঝুন্টু দে করেছেন ওল কচুর আবাদ। ওল কচু খেতে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট দূরত্বে সারি করে লাগানো ওল কচু গাছ বেড়ে উঠছে। নরম কাণ্ডের কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে মেলে ধরেছে সবুজ পাতা। পাতা আকৃতি আর নজর কাড়া অবয়বে সেজে প্রতিটি গাছ। কৃষক রূপক জানান, গত চৈত্র মাসের শেষের দিকে খাগড়াছড়ির ঘাগড়া বাজার থেকে ওল বীজ সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন তিনি। জমিতে সার ও ওষুধ প্রয়োগ করে জমি তৈরি, বীজ লাগানো, জমির পরিচর্যা ও সেচসহ তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আরও ৫ হাজার টাকা খরচ হবে তার। প্রতিটা গাছে ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত ফলন পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। এরমধ্যে খেত থেকে ৩০০ কেজি ওল কচু আগাম বিক্রি করেছেন। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় লাভবান হয়েছেন তিনি। আগাম সবজি হিসেবে বাজারের চাহিদাও রয়েছে ভালো। রূপকের খেত দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই এলাকার শঙ্কর দে, ঝুন্টু দে, দোলন দেসহ কয়েকজন কৃষক করছেন ওলকচুর আবাদ। ফলনও হয়েছে ভালো। স্বল্প পুঁজিতে ও পরিশ্রমে লাভবান হওয়ায় ওই এলাকায় ওলকচুর চাষ বাড়ছে বলে জানান রূপক দে। তবে ওই এলাকার কৃষক মো. সাইফু ও মো. খোকন জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ের দুম্বাই চরে ওল কচুর চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। বন্য শুয়োরের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। প্রায় ২০ শতক জমির ওল কচু নষ্ট করে দিয়েছে শুয়োরের দল।

মো. সাইফু বলেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমদিকে ১৫০টি মাদায় (গর্তে) ৫০০ গ্রাম করে বীজ রোপণ করেছিলেন। এসব বীজ ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের কচু হয়। এ খেত থেকে উৎপাদিত ওল কচু বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ধরে বিক্রি করলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হতো। বুনো শুয়োরের দল সমস্ত খেত তছনছ করে দিয়েছে।

ওই ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উদয়ন আশ্চার্য এ ব্যাপারে বলেন, বন্য শূকর মূলত খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসে। ওলকচু তাদের পছন্দের একটি খাবার। বন্য প্রাণীর হাত থেকে ফসল রক্ষায় শক্ত বেড়া দিতে হবে। বন্য প্রাণীর কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষি বিভাগ থেকে সরাসরি সহায়তা দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে বনবিভাগের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে সহায়তা পাবেন। তবে প্রাণীর আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হলে থানায় জিডি করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবেদন দিলে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানান চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ভাণ্ডালজুড়ি বিট অফিসার মো. সাইফুল। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সৌমিত্র দে জানান, ওলকচু চাষে সময় একটু বেশি লাগলেও খরচ হয় নামমাত্র। কিন্তু লাভ হয় তিন থেকে চার গুণ। এ ওলকচু এমন একটি ফসল যাতে পোকাণ্ডমাকড়ের বালাই নেই, রোগবালাই কম। অনাবৃষ্টি বা খরার কবলে না পড়লে সেচের প্রয়োজন হয় না। পরিত্যক্ত আধা ছায়াযুক্ত জমিতেও এটি হয়। অবশ্য রোদযুক্ত স্থানে লাগানো গেলে ফলন ভালো হয়। গর্ত করে মাটির ১ ফিট নিচে এই কন্দ লাগানো হয়। ৭-৮ মাসে ফসল তোলা যায়। তাছাড়া বাজার দর কম থাকলে, ফসল না তুললেও ক্ষতি হয় না। ওলকচু মাটির নিচে থাকলে আকারে বড় হয় কিন্তু নষ্ট হয় না। এজন্য ওলকচু চাষে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। এরইমধ্যে বোয়ালখালীতে ওলকচু চাষাবাদ করে কৃষকেরা খুবই খুশি। কারণ ফলন ভালো হয়েছে আর বাজারে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ওলকচু একটি লাভজনক কন্দ জাতীয় সবজি। বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই বারি-১ জাতের ওলকচু চাষে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শের পাশাপাশি ওলকচু চাষে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করছে। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত