ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাটচাষিরা নানামুখী সংকটে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাটচাষিরা নানামুখী সংকটে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি মৌসুমে হাওর অঞ্চলে সোনালী আঁশ পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাটকাটা, জাগ, ও শুকানোর কাজ। তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতে পাট পচানোর জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত পানির দেখা না পাওয়ায় অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন ভাটি অঞ্চলের পাট চাষিরা। পাট চাষিদের অভিযোগ পাটের উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় অনেক কৃষকই পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসন বলছে এবছর পাটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

পাটের অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ, বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় অর্থকরী ফসল পাটের সেই সোনালী দিনগুলো এখন আর নেই। তারপরও বংশ পরম্পরায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের পাট চাষিরা পাটের আবাদ করে যাচ্ছেন। চলতি বছর প্রতিকূল ও উষ্ণ আবহার কারণে পাটের আকার কিছুটা ছোট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীন জনপদে এখন চলছে পাটকাটা, মারাই এবং পাট শুকানোর কাজ। তবে বর্ষা মৌসুমে জমিগুলোর আশপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না আসায় পাট গাদা এবং পচানো নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন পাট চাষিরা। এতে শ্রমের মূল্যের পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা অনুযায়ী পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেকটাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাট চাষিরা।

জেলার নাসিরনগর অঞ্চলের পাট চাষি মো. জাকির বলেন, জমিতে পাটের আবাদ করতে গিয়ে এখন আমাদের অনেক আর্থিক সমস্যা হচ্ছে। সারের দাম অনেক বেশি, চাষ করতেও এখন টাকা বেশি লাগে। সব খরচ দিয়ে আমাদের বিক্রির দামে গিয়ে পোষায় না। এখানে ব্যাপারীরা লাভবান হচ্ছেন। তারা স্টক রেখে উচ্চ দামে বিক্রি করেন। পক্ষান্তরে আমরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাইনা। তিনি বলেন, এবছর ৩ হাজার ২০০ টাকা প্রতিমণ দরে পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি আমাদের জন্য পাটের একটা নির্ধারিত দাম দিতো তাহলে আমরা সেই দামে বিক্রি করতে পারতাম।

একই অঞ্চলের মো. হারিজ মিয়া নামে অপর পাট চাষি জানান, আমরা পাট করে খরচাপাতি করে শেষে গিয়ে পুঁজিই পাই না। দামে গিয়ে আমাদের খরচের সঙ্গে মিলে না। সরকার দাম দিবে এই হিসাব করেই প্রতি বছর পাট বিক্রি করতে পারতাম। তিনি বলেন, গতবার পাটের দাম না পাওয়াতে এবছর অনেক কৃষক পাট চাষ করেনি। এছাড়া এবছর আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, খালে প্রয়োজনীয় বর্ষার পানি না আসায় আমরা পাট গাদা এবং পচানোর জন্য অনেক দূর যেতে হচ্ছে। এতে শ্রম ও খরচ দুটোই বাড়ছে। কিন্তু দামের বেলায় সেই হিসাব মিলাতে পারি না। আমাদের যদি সরকার একটা দাম নির্ধারণ করে দিতো তাহলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হতাম। কিছু টাকা হয়তো আমাদের থাকতো।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে হাওর বেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নাসিরনগর, সরাইল, বিজয়নগর, নবীনগর এবং বাঞ্ছারামপুর এলাকার ৪ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে দেশি, কেনাফ, মেছতা এবং তোষা জাতের পাটের আবাদ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৫৩ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে এ বছর কেনাফ পাটের ফলন ভালো হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর অঞ্চলটি পাটের জন্য উপযোগী। কিন্তু এবছর পাট পচানোর ক্ষেত্রে কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে, কারণ পর্যাপ্ত পানি এখনও আসেনি। পানি বাড়লে কৃষকদের জন্য উপকার হতো। তিনি বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব্বোচ্চ নজর রাখা হবে, কৃষকেরা যেন তার প্রকৃত মূল্যটা পায়। আমরা আশা করি এবছর মূল্য নিয়ে কৃষকদের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের আলোচনা চলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বাজারমূল্য নির্ধারণ করে আমরা কৃষকদের জানিয়ে দিব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত