ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফেনীতে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা

ফেনীতে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা

চলতি বছর তিন দফার বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার কৃষিখাত। নষ্ট হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকার ধানসহ অন্যান্য ফসল। সেই ক্ষতচিহ্ন ও ফের বন্যার শঙ্কা নিয়েই কৃষক মাঠে নেমেছে আমন ধানের আবাদ নিয়ে। স্বপ্ন বুনছেন ভালো ফলনে সুদিন ফেরানোর। আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার আশাবাদ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের। চব্বিশের ভয়াবহ বন্যার রেশ কাটিয়ে উঠার আগেই চলতি বছরও কয়েকদফা বন্যা হয়েছে ফেনীতে। তবে বারবারই ঘুরে দাঁড়ানো প্রত্যাশা নিয়ে কৃষকেরা মাঠে নামেন।

এ বছর তিন দফার বন্যায় ডুবে গিয়েছিল ফেনীর বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কেউ হারিয়েছেন বীজ, বীজতলা, বালু জমা হয়ে কেউ আবার হারিয়েছে জমির উর্বরতা। তবু হাল ছাড়েননি কৃষক। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষত নিয়েই মাঠে নামিয়েছেন নতুন স্বপ্ন ‘আমান ধান’। ফুলগাজী এলাকার কৃষক সুলতান আহমদ বলেন, গেল বছর আমন মৌসুমে ফলন একদমই ঘরে তোলা যায়নি বাজার থেকে কিনে খেতে হয়েছে। এ বছর ফলন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী। পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার কৃষক সফি উল্লাহ জানান, জমিতো খালি রাখতে পারব না। বৃষ্টি কম থাকায় আমন আবাদে মাঠে নেমেছি। ফলন দেওয়ার মালিক আল্লাহ। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়ার কৃষক এরশাদ উল্যাহ জানান, সরকার থেকে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ ভর্তুকি দেওয়া হলে কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে সহজ হতো। কয়েক দফার বন্যার ক্ষতির মধ্যেও চলতি মৌসুমে আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ বলছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমিতেও আবাদের আওতায় আসবে। কৃষি অফিস জানান কৃষি আবাদ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি ও সহায়তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. জগলুল হায়দার বলেন, ফেনীর মানুষের প্রধান ফলন আমন ধান। এটি ঠিকমতো না হলে মানুষের খাদ্য জোগাতে টান পড়ে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকায় মানুষ এবার আমন ধান চাষে মাঠে নেমেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার বাইরে আরও এক হাজার জমিতে আমনের আবাদ হবে।

তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। চলতি বছর বাঁধভাঙা পানির তোড়ে জেলার অন্তত ২৯ হাজার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদা খেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদা খেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসেবে, বন্যায় প্রায় ৩৮ কোটি সাত লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। ফেনীর কৃষকদের কাছে মাঠের চারা শুধু ধানের নয় বরং স্বপ্নের। বন্যা-বাদলার দেশে প্রকৃতি যতই শত্রুতা করুক, বৈরী হোক। ভাটির এই জনপদের মানুষ জানে, কীভাবে প্রকৃতিকে জয় করতে হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত