
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সব সড়ক এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে। উপজেলার প্রধান সড়ক ছাপিয়ে গ্রামের অলিগলিতে চলছে বেপরোয়া এসব যানবাহন। দিন কি দিন অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের কারণে রীতিমতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে অটোরিকশা। গত মঙ্গলবার চরশিবপুর গ্রামে শিফাত আহমেদ নামে ১০ বছরের অটোরিকশা চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেপোয়ারা অটোরিকশার কারণে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় গত ৩ বছরে অন্তত ২০ জন নিহত ও ৫ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
দিনের পর দিন এসব যাবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে নিত্য যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নানা দুর্ঘটনা। বিশেষ করে অনভিজ্ঞ লোকেরা অটোরিকশা চালানোর পেশায় জড়িত হওয়ায় এবং অনেক চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। মানুষের এই ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এবং সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়কগুলোতে বেপরোয়াভাবে অটোরিকশাগুলো চলছে। কে কার আগে যাবে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের মাঝে এই প্রতিযোগিতাটা বেশি দেখা যায়। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো রাস্তায় যত্রতত্র রাখার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এসব রিকশায় লাগানো হয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন ও এলইডি লাইট। এর ফলে হচ্ছে শব্দ দূষণ এবং এলইডি লাইটের কারণে রাতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বাঞ্ছারামপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাইবুর হাসান মাসুম বলেন, বর্তমানে অটোরিকশার জন্য কাউকে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করা যায় না। সড়কে দ্রুতগতিতে চলাচল করায় প্রায়ই তারা গায়ের ওপর উঠিয়ে দেয়। অনেক সময় অঙ্গহানির ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে যাত্রীর চেয়ে সড়কে অটোরিকশার পরিমাণ অনেক বেশি। আবার এসব যানবাহনকে ঘিরে অনেক জায়গায় চলে চাঁদাবাজি।
স্কুলশিক্ষার্থী সালমা বেগম বলে, রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় আমাদের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়। অটোরিকশার সঙ্গে লেগে আমাদের অনেকের স্কুল ড্রেস ছিঁড়ে গেছে।
উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি ব্যাটারিচালিত রিকশা এলাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের উচিত এগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা এখন উপজেলাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, সমস্যা হচ্ছে ওদের লাইসেন্স করতে হয় না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপ্রাপ্ত ও অদক্ষ চালকরা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, যানজটও বাড়াচ্ছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে কি করা যায় দেখছি। বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান জামিল খান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু জনবলের অভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ পুনরায় মোতায়েনের চেষ্টা চলছে।