
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তা। কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট ছিল একসময়ের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ঘাট দিয়ে কক্সবাজার শহর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করত জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ, এখন সবই স্মৃতি। এ জায়গাতে অন্তত ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস ও নদী ভরাট করে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক পাকাণ্ডসেমিপাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, এভাবে নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁকখালী নদী দখল করে নির্মিত হয়েছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা। এ অবস্থায় বাঁকখালী নদী দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গতকাল সোমবার অভিযানে নামে সরকার। বিআইডব্লিউটিএর সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন যৌথ এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, বাকখালী নদী দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য গতকাল সোমবার থেকে অভিযান শুরু করা হয়েছে। অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে। অভিযান চলাকালীন সময়ে যাতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়, এজন্য পুলিশ, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাব উপস্থিত রযেছে।
জানা যায়, বাকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ। সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও এক মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন। কস্তুরাঘাট থেকে সেতুর দিকে যেতে সড়কের পূর্ব পাশে পাহাড়সমান বর্জ্যরে স্তূপ চোখে পড়ে। শহরের ময়লা আবর্জনা ট্রাকে ভরে এখানে ফেলা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে সেই বর্জ্য নিচু জায়গায় ভরাট করা হচ্ছে স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশকর্মীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর টানা ৪৫ দিনে প্যারাবনের উচ্ছেদ করা জায়গায় ফের ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এ পর্যন্ত কেউ বাধা দেয় নি। পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, কক্সবাজার পৌরসভা থেকে খুরুশকুলে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সেতুর কারণেই ঐতিহ্যবাহী নদীর মরণদশা যাচ্ছে। দেড় মাইল প্রস্থের নদীটি সংকুচিত হয়ে সেতুর গোড়ার অংশ এখন ২০০ ফুটের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তাতে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও পর্যটন শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় ৯৭ টনের বেশি বর্জ্য। এর মধ্যে ৭০ টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। অবশিষ্ট বর্জ্য সাগরে চলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর বুক এখন ময়লার পাহাড়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত শনিবার কক্সবাজার সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ‘হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বাঁকখালী নদী দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে বিশেষ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে বাঁকখালী নদী রক্ষায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। নদী দখল করে নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এদিকে গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।