ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর কারাম উৎসব

মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর কারাম উৎসব

নওগাঁর মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠিরদের ৩০তম ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব হয়ে গেলো। গতকাল সোমবার বিকালে উপজেলার নাটশাল মাঠে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা কমিটির আয়োজন করে। আশপাশের জেলা থেকে আগত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির ২৫ টি দল উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে। সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন- জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার। উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডী।

ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশপরমপরায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির পূর্ণিমা তিথিতে কারাম পূজা পালন করে। পূজা-অর্চনা আর নাচণ্ডগানের মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠিরা এই কারাম উৎসব পালন করে আসছে। কারাম পূজা বা ডাল পূজাও বলা হয়। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষের কাছে কারাম একটি পবিত্র গাছ। এই গাছকে মঙ্গলের প্রতীকও বলে মনে করা হয়। কারাম ডাল মাটিতে পুঁতে বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান ও কিচ্ছা বলার মধ্যে দিয়ে এই পূজা করা হয়। আর এ দিনটির জন্য অধির আগ্রহে থাকেন তারা। এ পূজার মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা ও রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকার প্রত্যাশা করেন তারা।

উপজেলার নাটশাল মাঠে নওগাঁসহ পাশবর্তী জয়পুরহাট ও নাটোর জেলা থেকে মোট ২৫টি দল উৎসবে অংশ নেয়। এ সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সি মানুষ দলবদ্ধ ছন্দময় নাচের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি তুলে ধরে। এ সময় পুরো এলাকা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠিসহ সব সম্প্রদায় মানুষের হয়ে উঠে মিলন মেলা। এলাকার কারাম উৎসব উপলক্ষে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠির এখন মূখরিত হয়ে থাকে।

জেলার পত্নীতলা থেকে আসা অঞ্জলী খানকো বলেন, কারাম আমাদের জাতীয় উৎসব এবং বংশ পরমপরায় পালন করে আসছি। এ পূজার মাধ্যমে সংসারের উন্নতি, স্বামী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো ঈশ্বরের কাছে এই চাওয়া। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাকী তিরকি জানায়, ঈশ্বরের কাছে চাওয়া পড়াশুনা ভাল করাসহ যেন জীবনে উন্নতি করতে পারি। এছাড়া বাবা-মার সেবা করাসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি। এ উৎসবে দল বেধে নাচতে পেরে অনেক খুশি। জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি আমিন কুজুর বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় ভাবে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। দলবদ্ধ ছন্দময় নাচের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি তুলে ধরে। আমাদের ৯টি দাবি আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পৃথক ভূম কমিশন গঠন করার দাবি জানায়।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজাদুল ইসলাম বলেন, আদিবাসীরা হচ্ছে প্রকৃতির পূজারি। তারা মনে করে প্রকৃতি তাদের ভালো রাখতে পারবে। আর এলক্ষ্যে তারা কারাম পূজা করে থাকে। এ পূজার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও দেশের মঙ্গল বনে নিয়ে আসবে বলেও মনে করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি আমিন কুজুর এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন- মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান। এ সময় জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজাদুল ইসলাম, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেন মুরাদ ও আইএসসির নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত