ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইলিশের ভরা মৌসুমেও জেলেপল্লিতে বিষাদ

* মা ইলিশ রক্ষায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে নিষেধাজ্ঞা * জাটকা ধরায় সারা বছর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা
ইলিশের ভরা মৌসুমেও জেলেপল্লিতে বিষাদ

ইলিশের ভরা মৌসুম শেষের দিকে। কিন্তু এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পাথরঘাটায় নেই আগের মতো ইলিশের দেখা। দামও অস্বাভাবিক। এসবের মধ্যেই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মা ইলিশ রক্ষায় আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ সব নিয়ে হতাশ জেলে, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের প্রশ্ন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ কি এ বছর আর মিলবে না। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হক জানান, মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সে হিসাবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর সঙ্গে শেষ হবে ইলিশের ধরার মৌসুম। তিনি আরও জানান, ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষায় গত বছর নিষেধাজ্ঞা হয়েছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বছর নিষেধাজ্ঞা একটু এগিয়ে আসতে পারে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে নানা প্রতিকূলতার কারণে নদীতে আর ইলিশ বাড়ানো সম্ভব নয়। এদিকে চারটি কারণের সাগর মোহনায় জাটকা রক্ষা এবং ইলিশ আহরণের ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করছেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক, ঢাকা, মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, অতি সম্প্রতি অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মাছের মূল্য নির্ধারণে সভা ও ইলিশের উৎপাদন কমা এবং অস্বাভাবিক দাম বাবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৭০-৮০ শতাংশের উপরে। বাকি ২০-৩০ শতাংশ ইলিশ এলসি সাইজ। আবার কোনো কোনো আড়তে এক কেজি বা তার চেয়েও বেশি ওজনের ইলিশ মাছ দেখা গেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর কেজিপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকার বেশি ইলিশের দাম বেড়েছে। এছাড়া ইলিশ ভারতে রপ্তানির কারণে বড় ইলিশের দাম একটু বেশি বেড়েছে বলে জানান মাছের আড়তদাররা। ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম ২৫০০ টাকা। (৭০০-৯০০) গ্রামের ইলিশের প্রতি কেজি ২০০০ টাকা। ৫০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা।

এদিকে নদী তীরের জেলেরা ইলিশ নিয়ে আরও বেশি হতাশ। উপজেলার পদ্মা গ্রামের আনোয়ার, সেলিম, মেহেদী, কাকন মিয়া এবং হরিণঘাটা গ্রামের আলামিন, জলিল এবং কালাম সরদার জানান, ইলিশ এখন কিছু মিলছে। কিন্তু তাতে দাদন (ঋণ) শোধ করা সম্ভব নয়। কারণ আগামী মাসেই আসছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞ। এখনও ধার দেনা শোধ না করতে পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হবে। চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ মাছ বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুর রহমান জানান, সাগরে ডুবো চর, আবহাওয়া পরিবর্তন, পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, বৃষ্টিপাত হ্রাস, অবৈধ কারেন্ট জাল এবং জাটকা রক্ষায় ব্যর্থতার কারণে ইলিশ আহরণ কমে আসছে।

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং দাম বাড়ার বিষয় আমরা মনিটরিং করেছি। জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় এতো চেষ্টার পরও সফলতা আসছে না। এর কারণে আমরা সাগরে ইলিশ রক্ষা এবং আহরণে ব্যর্থ। ট্রলিং বোট, সাগরের মুখে জাল পাতা, বিদেশি বোট এবং বাণিজ্যিক ট্রলার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এই চার কারণে ইলিশ উৎপাদন গত বছর প্রায় ৪০ হাজার টন কম হয়েছে। এ বছরও গত বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন আরও কমবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, নদীতে শত চেষ্টা করেও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ নাই। কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সংকট, সাগরে ডুবো চর এবং নাব্যতা সংকটের কারণে সব মাছের উৎপাদন কমেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত